লালমনিরহাটের দোয়ানী পয়েন্টে সোমবার তিস্তা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৪৫ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে ৫৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তার পানির তোড়ে জেলার আদিতমারি উপজেলার নদী রক্ষা কুটিরপাড় বাঁধের ২শ’ মিটার ধসে গিয়ে হাজারো পরিবার প্লাবিত হয়েছে। এদিকে গত ৭ দিন থেকে চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি থাকলেও অধিকাংশ চরেই পৌঁছেনি ত্রাণ কিংবা সাহায্য সহযোগিতা, ফলে দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসী মানুষ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫৩ মে. টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বিতরণ করা হলেও ৬৩ চরের অধিকাংশ দুর্গত মানুষই পাননি সরকারি সাহায্য।
৭ দিন ধরে পানি বন্দি রয়েছে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুরনা, ডাউয়াবাড়ি, গড্ডীমারী, পাটিকাপাড়া, চর গড্ডীমারী; কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর, চর বৈরাতী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, গোর্বধন, কুটির পার ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, মোগলহাট, কুলাঘাটসহ নদী তীরবর্তী ১৬টি ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজ।
দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দী মানুষের। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও তীব্র খাদ্য সংকট।
পানিবন্দী পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে এখনও অধিকাংশই পাননি ত্রাণ কিংবা কোন সাহায্যে সহযোগিতা। এদিকে তিস্তার পানি উজান থেকে ধেয়ে আসার কারণে ব্যারেজ পয়েন্টে প্রতিদিনই পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সোমবার ব্যারেজ পয়েন্টে পানি কিছু কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডালিয়া ব্যারাজের সবক’টি জল কপাট খুলে রেখেছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নিবাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারত তাদের গোজলডোবা ব্যারেজের ১০টি জলকপাট বন্ধ করে দেওয়া তিস্তার পানি প্রবাহ কিছুটা কমেছে।
এদিকে ধরলা নদীর পানি সকালে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবের কুটি গ্রামে। হুমকির মুখে পড়েছে শহররক্ষা বাঁধ। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। এদিকে পানিবন্দীদের মাঝে সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা অনেকের কাছে পৌঁছেনি বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
চর খুনিয়াগাছ ও চর রাজপুরের বাসিন্দা ভুক্তভোগি জহিরণ বেওয়া, আক্কাস, গফুর ও মেহের আলী জানান, গত ৭ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে থাকলেও তারা কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাননি। যদিও লালমনিরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আহসান হাবিব পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।