হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ‘পানি বাড়ায় ঘরত আর থাকার উপায় নাই। তাই ছওয়া-পোয়া নিয়া বাইর হয়া আসনো। অত্যি যেকোনো সাগাইর বাড়িত যামো। সেঠে যেয়া থাকমো কয়দিন। পানি নামলে ফের হামার ঘরত আসমো। পানির স্রোতে ঘরের সউগগুলা ভাসি গেইছে।’
শনিবার বিকেলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার নিজ গড্ডিমারী গ্রামের বাসিন্দা মশিয়ার রহমান এভাবেই জানাচ্ছিলেন বন্যার পানির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার কথা।
মশিউর রহমান জানান, নদী অববাহিকায় বাড়ি হলেও উঁচু ভিটায় থাকতেন তারা। পানিতে ডোবেননি কখনো। কিন্তু এবারের বর্ষণে তারা টানা পাঁচদিন ধরে পানিবন্দী।
চৌকির উপর চৌকি বসিয়ে নিদ্রাহীন কাটিয়েছেন তিনদিন। খাবার হিসেবে ছিল মুড়ি-চিড়া-গুড়। শুক্রবার মধ্যরাতে হঠাৎ তীব্র গতিতে ধেয়ে আসায় বিছানা পর্যন্ত পানি।
ভেসে যায় ঘরের অনেক জিনিসপত্র। শেষ হয়ে গেছে শুকনো খাবার। তাই জীবন বাঁচাতে বুক সমান পানির পাড়ি দিয়ে চলে আসেন শহরের সড়কে।
একই এলাকার রুনা লায়লা বলেন, টানা পাঁচদিন পানিতে থাকায় হাত-পায়ে ঘা হয়েছে। পেটে ক্ষুধা থাকলেও বিশুদ্ধ পানি বা খাবার কম করে খেয়েছি।
গড্ডিমারী মেডিক্যাল মোড়ের বাসিন্দা হাফিজা বেগম বলেন, যাদের বাড়ি রাস্তার পাশে বা যারা মেম্বার-চেয়ারম্যানের আত্মীয় তারাই ত্রাণ পায়।
আমাদের গ্রামে প্রায় চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দী। আমরা কেউ ত্রাণ পাইনি। এক কেজি চিড়া-মুড়ি-গুড় পাঁচজন খেয়েছি। রান্না করার কোনো উপায় নেই। ত্রাণ বিতরণের খবর পেলেও এখনো চাল বা শুকনো খাবার জোটেনি।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার ফেরদৌস আলম বলেন, ৪০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও আড়াই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। খাবার প্যাকেট করতে দেরি হওয়ায় বিতরণ করা শুরু হয়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, ১১০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুকনো খাবার বিতরণ করতে উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। জেলা ত্রাণ শাখার গুদামে এক হাজার ৯৪৭ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে।
তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ শনিবার দুপুর থেকে কমতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় ৫০ সেন্টিমিটার থেকে কমে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনো সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে।