সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখার ক্ষেত্রে কত মানুষের যে ভূমিকা ছিলো তা বলে শেষ করা যাবে না। রুশেমা বেগম ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তার অবদান ভুলার নয়। আমি চেষ্টা করি আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতাকর্মী যারা যেখানে আছেন তাদের মূল্যায়ন করার, তারা যাতে একটু স্বস্তি পায় সেই চেষ্টা করি।
সংসদে ফরিদপুরের সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৪-এর এমপি রুশেমা বেগমের মৃত্যুতে বুধবার সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, চলমান সংসদের এমপি রুশেমা বেগমের মৃত্যুতে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের কার্যক্রম স্থগিত রেখে সংসদ অধিবেশনের বৈঠকের শুরুতেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আলোচনার পর শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে গৃহীত হয় ও মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এর আগে, এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে চলমান সংসদের সংসদ সদস্যের মৃত্যুর কারণে সংসদের অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এসময় প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত বলে জানান সংসদের সভাপতি। রুশেমা বেগম মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিরোধী দলীয় হুইপ মশিউর রহমান রাঙা প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রুশেমা বেগম অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। একটা যুগে মেয়েদের লেখাপড়া করা কঠিন ছিল, তিনি সেই সময় লেখাপড়া করেছেন। তিনি শিক্ষিকা ছিলেন। আমি বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে যখন দেশে ফিরি তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও তার সহচর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। রুশেমা বেগম এবং তার স্বামী ইমামউদ্দিন ছিলেন তাদের অন্যতম।
তিনি আরও বলেন, রুশেমা বেগম কখনও বলেননি আমার জন্য কিছু করো। উনি কখনও কিছু চাননি। নির্বাচনের আগে একদিন তিনি আমার সাথে নির্বাচন বিষয়ে কিছু কথা বলতে এসেছিলেন। তখন আমার বোন রেহানা বললো, উনাকে সংরক্ষিত আসনের এমপি করতে হবে। আমি বলেছিলাম করা হবে। নির্বাচনের পর উনাকে বলেছিলাম- ‘একটা ফরম নিয়ে পূরণ করে দেন। এতে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। ‘
শেখ হাসিনা আরও বলেন, রুশেমা বেগম বাজেট অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যে বক্তব্য দিলেন, সেটা ঐতিহাসিক তথ্য। যারা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্ত ছাড়ায় তাদের জন্য একটা সঠিক জবাব দিয়েছিলেন তিনি। এটা ইতিহাস হিসেবেও সংসদে সংরক্ষিত থাকলো।
তিনি আরও বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসে। ইমামউদ্দিন ও রুশেমা বেগমের পরিবারের উপরও সেই অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসে। এর মধ্যে থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধরে রেখে রুশেমা বেগম ও তার স্বামী ইমামউদ্দিন কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত মা বোনদের স্বাধীনতার পর তিনি খুজে বের করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে এনে আশ্রয় দেওয়ার কাজ করেছেন। তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তার অবদান ভুলার নয়। আমি চেষ্টা করি আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতাকর্মী যারা যেখানে আছেন তাদের মূল্যায়ন করার, তারা যাতে একটু স্বস্তি পায় নেই চেষ্টা করার।
আমির হোসেন আমু বলেন, রুশেমা বেগমের স্বামী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহচর। তার স্ত্রী হিসেবে রুশেমা বেগম ছিলেন তার সহযোগী।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার পর দুস্থ নারীদের পুর্নবাসনের জন্য তার যে উদ্যোগ এটা ঐতিহাসিক ঘটনা। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি এই কাজ করেছেন। আমরা যখনই ফরিদপুর যেতাম তখনই ইমাম ভাইয়ের বাড়ি উঠতাম। তিনি আওয়ামী লীগের জন্য ভূমিকা রেখে গেছেন।
বেগম রওশন এরশাদ মরহুম রুশেমা বেগমের কার্যক্রমকে নারীশিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তার অসহায় নারীদের পুনর্বাসনে তার অবদানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের নেতারা ফরিদপুর গেলে ইমাম ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতাম এবং ইমাম ভাইয়ের স্ত্রী রুশেমা ভাবি আমাদের দেখাশোনা করতেন। রুশেমা বেগম রাজনীতি করেছেন আবার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে সংসদ সদস্য করে মূল্যায়ন করেছেন এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
সংসদে আনা শোক প্রস্তাবে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি রুশেমা বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রুশেমা বেগম ১৯৯৬ সালে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি