ঢাকা: বিশ্বকাপের শুরুটা যেমন হয়েছে, শেষটাও তেমনই দেখতে চাই। অর্থাৎ জয় দিয়ে শেষ করতে পারলে ভালো লাগবে। বাংলাদেশ যে সেমিফাইনাল খেলতে পারছে না, জিততে পারলে এ কষ্ট একটু হলেও কম হবে। ২ জুন এই ইংল্যান্ড থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল। ওই জয়টাই সেমিফাইনাল খেলার ইচ্ছাটাকে আরও প্রবল করেছিল। এরপর পুরো টুর্নামেন্টেই খেলোয়াড়রা ভালো করেছে। টুকটাক ভুল হওয়ায় দুটি ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যেও যাওয়া হলো না।
আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান এই দলগুলোকে টার্গেট করেই বিশ্বকাপ খেলতে .নেমেছিল বাংলাদেশ। যেখান থেকে তিনটি ম্যাচ আমরা জিততে পেরেছি। শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় একটি পয়েন্ট লস হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি হাতের মুঠোতেই ছিল। দুর্ভাগ্য, কিছু ভুলের কারণে জেতা যায়নি। এই দুই দলের কাছ থেকে তিন পয়েন্ট নিতে পারলে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ম্যাচটা খেলত বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে চতুর্থ দল হিসেবে আমরাই হয়তো সেমিফাইনাল খেলতাম। টিম ম্যানেজমেন্ট ও খেলোয়াড়দের পরিকল্পনা ছিল এটা। এই ছয় দলের বাইরে একটা বড় দলকে হারাতে পারলে সেটা হতো বোনাস। যেমন ভারতের বিপক্ষে আমরা জয়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিলাম। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে অন্যরকম হতে পারত। সেমিফাইনালে যেহেতু যাওয়া হচ্ছে না, সেহেতু ওসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। টার্গেটে থাকা একটি ম্যাচ এখনও বাকি রয়েছে, সেটি পাকিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশের মতো পাকিস্তানেরও এটি বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। লর্ডসে অনুষ্ঠেয় ম্যাচটি দুই দলই জিততে চেষ্টা করবে। সে ক্ষেত্রে যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। আশা করি, ছেলেরা সেরা ছন্দ দিয়ে লর্ডস থেকে জয় নিয়ে দেশে ফিরবে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারলে ৯ পয়েন্ট হবে। বিশ্বকাপ পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ বা ছয় নম্বরে থেকে শেষ করার সম্ভাবনা থাকবে। যেটা র্যাংকিংয়ের জন্যও ভালো। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি আমরা জিততে পারিনি, তবে ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আমাদের ব্যাটিংয়ে যে গভীরতা আছে, তা পুরো বিশ্বকাপেই দেখা গেছে। আমি বলব, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতের পরই বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তি। ৩০০ প্লাস রান চেজ করেও জিতেছি আমরা। পুরো টুর্নামেন্টে যেটুকু দুর্বলতা ছিল, তা বোলিংয়ে। বিশেষ করে পেস বোলিংটা আর একটু ভালো হলে আরও ভালো ফল হতে পারত। মুস্তাফিজকে আমরা সেরা ছন্দে পেলাম টুর্নামেন্টের শেষ পর্যায়ে এসে। রুবেলের সার্ভিসটা আমরা নিতে পারিনি। সাইফউদ্দিন মোটামুটি ভালো করেছে। স্পিনাররা ভালো করেছে। তবে বোলিং ইউনিট হিসেবে আর একটু ভালো করলে যে কোনো দলকেই হারানো সম্ভব হতো। এ ছাড়া দু-একটি ম্যাচে ফিল্ডিংটাও ভালো হয়নি। শেষটায় সবই ঠিকঠাক হবে সে প্রত্যাশায় থাকলাম।
আমাদের ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং পাকিস্তানের চেয়ে ভালো। বোলিংয়ে ওরা ভালো। যদিও লর্ডসে পাকিস্তানের পেস বোলিং এখন খুব বেশি কার্যকর নাও হতে পারে। কারণ এখন বেশ গরম পড়েছে। উইকেটগুলো ড্রাই হয়েছে। সেদিক থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশ একটু ভালো ক্রিকেট খেললেই জিততে পারবে। আর পাকিস্তানের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। আজও নিঃসন্দেহে ভালো ক্রিকেটটাই খেলার চেষ্টা করবে সবাই। একটি বিশেষ জায়গায় আমি দৃষ্টি দিতে চাই- মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ এটি। দেশের জন্য সে ১৮-১৯ বছর ক্রিকেট খেলছে। গত চার বছর ধরে এই দলটাকে আগলে রেখেছে সে। অধিনায়কের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচটি জয় দিয়ে হলে তারও ভালো লাগবে। আমার দৃষ্টিতে সাকিব শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেটার। পুরো টুর্নামেন্টে সে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। মুশফিক ভালো করেছে। এই জায়গা থেকে আমার বিশ্বাস, শেষটাও জয় দিয়ে রাঙাবে তারা।
লেখক :জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক