লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের প্রেস কনফারেন্স রুমে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সাংবাদিকরা! মাশরাফি বিন মর্তুজা আসবেন বলে! আবেগী মুডে জানাবেন, এটাই শেষ ম্যাচ! কিন্তু না, টাইগার ক্যাপ্টেন আসেননি। প্রেস কনফারেন্সে এসেছিলেন স্টিভ রোডস।
কোচকে দেখে উপস্থিতি সবাই, একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলেন। কারও যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না! মাশরাফির অবসরের গুঞ্জনটা হঠাৎ থেমে গেল। গতকাল অনুশীলনও করেননি নড়াইল এক্সপ্রেস। সে কারণেই সবার ধারণা ছিল হয়তো বিদায়ের ক্ষণটা জানিয়েই দেবেন। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ম্যাচ খেলার পর অবসরের ঘোষণা দেওয়ার চেয়ে রাজকীয় ঘটনা আর কি হতে পারে?
বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নটা শেষ হয়ে গেছে আগের ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে হারার পরই।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আজকের ম্যাচটা একটা মর্যদার লড়াই। আগের দিন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড জিতে যাওয়ায় পাকিস্তানের সামনেও আর কোনো আশা নেই! অবশ্য কাগজে কলমে একটা সম্ভাবনা আছে তাদের। তবে সে সম্ভবনা এত দূরের সম্ভাবনা যে, এটা উল্লেখ করাই রীতিমতো হাস্যকর হয়ে যাবে। কেননা বাংলাদেশকে হারিয়ে নেটরানরেটে নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে সেমিতে যেতে হলে তাদের জয়ের ব্যবধান থাকতে হবে তিন শতাধিক রানের। সেক্ষেত্রে অবশ্যই টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে হবে পাকিস্তানকে। বিষয়টা এমন যে, পাকিস্তান প্রথমে ব্যাটিং করে ৩১১ রান করলে বাংলাদেশকে অলআউট করে দিতে হবে শূন্য রানে! আর বাংলাদেশ যদি টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেয় সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে সম্ভাবনা।
তাই সেমিফাইনাল নিয়ে পাকিস্তানের সাংবাদিকরাও আর কিছু বলছেন না। বরং মাশরাফির মতো গ্রেট একজন অবসরের ঘোষণা দিচ্ছেন কিনা সেদিকে ছিল বেশি আগ্রহ। মাশরাফিকে না পেয়ে স্টিভের কাছেই প্রশ্ন করা হলো, অবসর নিয়ে! এ বিষয়ে কিছুই জানালেন না, কোচ।
যেহেতু আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা হয়নি, তাই ওয়ানডেতে মাশরাফির এটি শেষ ম্যাচ কিনা এ নিয়ে সংশয় থাকছেই! কিন্তু এটা ঠিক যে, বিশ্বকাপে এটিই মাশরাফির শেষ ম্যাচ। এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এমন ম্যাচ নিয়ে দলের অন্যান্য ক্রিকেটাররা কতটা রোমাঞ্চিত? কোচ বলেন, ‘দলের সবাই মাশরাফিকে অনেক সম্মান করে। সে এমন একজন যোদ্ধা ক্রিকেটার, যে দলের জন্য লড়াই করতে ভালোবাসে। এ কারণেই সবাই তাকে অনেক ভালোবাসে। এটা মাশরাফির জন্য খুবই আবেগময় এক ম্যাচ। অন্য ক্রিকেটাররা মাশরাফির জন্যই ম্যাচটি জিততে চাইবেন!’
এমনিতেই বিশ্বকাপ নিয়ে এখন খুব একটা আগ্রহ নেই বাংলাদেশের। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটি দুটি কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এক. মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ, দুই. ‘খেলা হোম অব ক্রিকেট’ লর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হচ্ছে বলে!
এমন একটি ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করতে নেমে ডান হাতের কনুইয়ে আঘাত পেয়েছেন মুশফিকুর রহিম। নেটে ব্যাটিং করার সময় চোট পেয়েছেন। তবে ইনজুরি কতটা গুরুতর তা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। মিস্টার ডিপেন্ডেবলের ইনজুরির বিষয়ে কোচ বলেছেন, ‘ফিজিও না বলা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমার বিশ্বাস, মুশি খেলতে পারবে। খুব কঠিন কিছু হয়নি সম্ভবত। ’
কাফ ইনজুরির কারণে গত ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে এ ম্যাচে তার খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য ভারতের বিরুদ্ধেই ইনজেশন নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন রিয়াদ। কিন্তু ফিজিও খেলার অনুমতি দেননি। তাই শেষ মুহূর্তে রিয়াদকে একাদশের বাইরে রেখেই মাঠে নামতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।
লর্ডসে খেলা যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য স্পেশাল কিছু। তাই সবাই জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে খেলবেন বলেই মনে করেন কোচ। তবে এ ম্যাচেও দেখা যাবে দুরন্ত সাকিব আল হাসানকে। ইতিমধ্যেই ব্যাট হাতে ৫৪২ রান এবং বল হাতে ১১ উইকেট নিয়ে সেরা হওয়ার তালিকার সবার উপরে রয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে না পারায় এই বিশ্বকাপে এটিই সাকিবের শেষ ম্যাচ। এ ম্যাচেও নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। গতকাল লর্ডসে কঠোর অনুশীলন করেছেন তিনি। গতকাল সাকিবের প্রশংসা করতে গিয়ে কোচ স্টিভ রোডস বলেন, ‘সাকিবের মতো ক্রিকেটারের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। সে খুবই চমৎকার একজন মানুষ, চমৎকার এক ক্রিকেটার। তার কোনো অনুপ্রেরণার দরকার হয় না আমার কাছ থেকে। এই বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য সে প্রথম থেকেই মরিয়া ছিল। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তার সর্বনিম্ন স্কোর হচ্ছে ৪০! কী চমৎকার ব্যাটিং করেছেন তিনি। বোলিংয়েও অসাধারণ। ’
বিশ্বকাপের এই আসরে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচেও দাপট দেখানোর জন্য মরিয়া হয়ে আছেন সাকিব। ভালো কিছু করার জন্য তরুণ ক্রিকেটাররাও উদগ্রীব হয়ে আছেন। সেমিফাইনালের স্বপ্ন ভঙ্গ হলেও পাকিস্তানকে হারিয়ে শেষ পাঁচে থেকেই দেশে ফিরতে চায় বাংলাদেশ! তা ছাড়া আসল উপলক্ষ হচ্ছে, মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচ!