সিলেটে নিজের বড় মেয়ের বাড়ি থেকে কুলাউড়া আসার জন্য দুপুরে ঘর থেকে বের হোন মনোয়ারা পারভীন (৪৫) নামে এক গৃহবধূ। কিন্তু স্টেশনে প্রবেশ করার আগমুহূর্তে সিলেট থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়। ওই ট্রেনটি ধরতে না পারায় রাতের উপবন ট্রেনে উঠেন। আর এই যাত্রাই কাল হলো মনোয়ারার জন্য।
কুলাউড়ার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় বড়ছড়া ব্রীজের উপর দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি মারা যান। এসময় তার সহযাত্রী নিজের দ্বিতীয় মেয়ে কুলাউড়া ইয়াকুব-তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্রী রুকশানা পারভিন প্রাণপণ চেষ্টা করেও মাকে বাঁচাতে পারেননি। চোখের সামনে মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মেয়ে রুকশানা।
রবিবার রাতে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবেন এক্সপ্রেস ট্রেনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। মনোয়ারা পারভিন কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আব্দুল বারীর স্ত্রী।
জানা যায়, গত ২২ জুন (শনিবার) দুপুরে পারাবাত ট্রেনে মনোয়ারা পারভিন তার দ্বিতীয় মেয়ে কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্রী রুকশানা পারভিনকে সাথে নিয়ে তার বড় মেয়ে ইশরাত আরা মুন্নির সিলেটের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। রবিবার (২৩ জুন) নিহত মনোয়ারার একমাত্র ছেলে সিলেট শাহজালাল সিটি কলেজের ছাত্র শাহরি আহমদ দীপু সিলেট থেকে তার মা ও বোন রুকশানাকে একটি সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে সিলেট স্টেশনে পাঠান। সেখানে তারা বিকেলে পারাবত ট্রেন কুলাউড়ায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু পারাবত ট্রেন সময়মতো ধরতে না পারায় তারা রাতের উপবন ট্রেনে উঠেন। এরপর ট্রেনটি কুলাউড়ার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় আসার পর দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ট্রেনের বগি উল্টে যায়।
এ সময় নিহত মনোয়ারার মেয়ে রুকশানা তার মাকে উদ্ধারের প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। সাথে সাথে তার বাবাকে ফোন দিয়ে রুকশানা বলেন, ‘বাবা আম্মা মারা গেছেন, গাড়ি থেকে উনাকে বের করতে পারছি না। ’
খবর পেয়ে মনোয়ারার স্বামী কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল বারী ঘটনাস্থলে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য বাড়ি থেকে রওয়ানা দেন। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে স্ত্রীকে পাননি। এর আগে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
স্বামী আব্দুল বারী স্ত্রী মনোয়ারার লাশ শনাক্ত করে মরদেহ কুলাউড়ার টিটিডিসি এলাকায় বাসায় নিয়ে আসেন। মরদেহ বাসায় আনার পর শোকের মাতম শুরু হয়। তাকে এক নজর দেখার জন্য বাসায় সহস্রাধিক লোকের সমাগম ঘটে।
মৃত্যুকালে মনোয়ারা পারভিন স্বামী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সোমবার বিকেল ৫টায় মো. আব্দুল বারীর গ্রামের বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের গুপ্তগ্রামে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মনোয়ারার দাফন করা হয়।