ট্রেন্ট ব্রিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডের গ্যালারির সব দর্শক দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালেন। কিন্তু নির্বিকার মুশফিকুর রহিম! বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরি। কোনো আনন্দ নেই। উচ্ছ্বাস নেই। হেলমেটও খুললেন না। যেন বাধ্য হয়েই কেবল ব্যাটটা উঠালেন। শেষ পর্যন্ত মুশফিক অপরাজিতই রইলেন, বাংলাদেশ হেরে গেল ৪৮ রানে।
তবে এমন হারে কোনো লজ্জা নেই। কোনো গ্লানি নেই। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে ৩৮২ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে ৩৩৩ রান করাটা চাট্টিখানি কথা নয়! মুশফিক খেলেছেন ৯৭ বলে ১০২ রানের ইনিংস। একটি বিশাল ছক্কাসহ ৯টি চারের মার ছিল তার ইনিংসে। কাল বাংলাদেশ হারলেও ক্রিকেট বিশ্বকে নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে আরেকবার বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভয়হীন বাংলাদেশকেই দেখল বিশ্ব। ১৭৫ রানের টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর মনে হচ্ছিল হারের ব্যবধানটা বিশাল হবে। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ মিলে ১২৭ রানের জুটি গড়ে ঝিমিয়ে পড়া ম্যাচে গতি সঞ্চার করেন। এক সময় জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি করেছিলেন তারা। কেঁপে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া শিবির। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
মাহমুদুল্লাহ খেলেছেন ৫০ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। ৮ বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি বিশাল ছক্কা। তার ইনিংসটি ছিল এক কথায় অসাধারণ। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ততক্ষণ জয়ের আশাও ছিল টাইগারদের। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হওয়ার পরই ছন্দপতন হয়ে যায়।
তামিম ৭৪ বলে খেলেছেন ৬৪ রানের ইনিংস! হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বটে, তবে ড্যাসিং ওপেনার কাল যতটা না দলের জন্য ব্যাটিং করেছেন, তার বেশি নিজের কথা চিন্তা করেছেন! রানের পাহাড় তাড়া করতে নেমে এই ব্যাটিং স্বর্গেও কিনা একজন ওপেনার হাফ সেঞ্চুরি করতে রানের চেয়ে ১৫ বল বেশি খেলেছেন। তামিমের আউটের পরই ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়া গ্রিবে চলে গেছে অনেকটা। তারপরও লিটন দাস ছিলেন বলে খানিকটা আশা ছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৯৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলা লিটন কাল লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে যান। সাকিব আল হাসান গতকালও খেলেছেন ৪১ রানের ইনিংস। তবে সাব্বির রহমানের জন্য দিনটি খুবই হতাশার। সেরা ফিল্ডার এবং বিগ হিটার! কিন্তু কাল তার ক্যাচ মিসেই ১০ রানে জীবন পাওয়া অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার খেলেন ১৬৬ রানের ইনিংস। আর নিজে ব্যাটিংয়ে গিয়ে প্রথম বলেই আউট হয়ে ফিরলেন ড্রেসিংরুমে।
বাংলাদেশের হার অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে ৩৮১ রান করার পরই। গতকাল টাইগার বোলারদের ব্যর্থতার দিনে বাইশগজে ঝড় তুলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ১৪৭ বলে খেলেছেন ১৬৬ রানের ইনিংস। ১৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৫টি বিশাল ছক্কা। এই বিশ্বকাপে অসি তারকার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এটি। এর আগে টনটনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তবে কাল ওয়ার্নার ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। মাশরাফির বলে সাব্বির ক্যাচটি লুফে নিতে পারলে ১০ রানেই বিদায়ঘণ্টা বেজে যেত অসি তারকার। ৭২ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেছেন উসমান খাজা। অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্জ করেছেন ৫৩ রান। উদ্বোধনী জুটিতে তাদের এসেছে ১২১ রান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৯২। এই দুটি পার্টনারশিপই কাল অস্ট্রেলিয়াকে রানের পাহাড়ে পৌঁছে দিয়েছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দিনের সেরা তিন ব্যাটসম্যানের উইকেটই নিয়েছেন সৌম্য সরকার।
তবে একটি কাকতালীয় ঘটনা ঘটেছিল। ৩৪.২ ওভারে দুই দলেরই স্কোর ছিল ২০৩ রান! তবে পার্থক্য ছিল কেবল উইকেট পতনে। অস্ট্রেলিয়ার পড়েছিল মাত্র ১ উইকেট, কিন্তু বাংলাদেশের ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। শেষের ১৫.৪ বলে অসিরা করেছে ১৭৮ রান। সেখানে বাংলাদেশ করতে পেরেছে মাত্র ১৫৫ রান।