রেডিও বাংলাদেশ ৷ প্রথমে, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আর তার পরেই, বজ্রকণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। সীমান্তের কাঁটাতার ঘুচিয়ে রোমাঞ্চিত করে তুলত প্রত্যেক বাংলাভাষীকে। এই রেডিও বাংলাদেশ তখন আকাশবাণী কলকাতা থেকেই সম্প্রচারিত হতো। দীর্ঘকাল পর মুক্তিযুদ্ধের সেই ঐতিহাসিক ও মূল্যবান ‘রেডিও রেকর্ড’ বাংলাদেশের হাতে উপহারস্বরূপ তুলে দিল ভারত। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাতে এই উপহার তুলে দেয় অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর)।
বাংলাদেশ বহুদিন ধরে ভারতের কাছে এই মূল্যবান রেডিও রেকর্ড পাওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছিল ভারতের কাছে। অবশেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে বাংলাদেশকে তা উপহার হিসেবে দিল আকাশবাণী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দুই দেশের শীর্ষনেতার ভাষণ, বক্তব্য, সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি রেকর্ড সিডি আকারে সংরক্ষণ করে রেখেছে এআইআর। রেকর্ডের অনেক বিষয় বাংলাদেশের কাছে এত দিন ছিল না। যাও বা আছে, তার আবার মূল রেকর্ড নেই। দুই দেশেরই আশা, গুরুত্বপূর্ণ এই ডকুমেন্ট মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
ঐতিহাসিক এই রেকর্ডে আরো রয়েছে ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ। এ ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ নিয়ে দেওয়া বক্তব্য আর ভাষণও এতে রয়েছে।
দুটি সিডিতে ভরতি করা ঐতিহাসিক এই রেকর্ড বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি সিডির শিরোনাম ‘স্ট্রাগল অব আ নেশন’। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আকাশবাণী কলকাতা থেকে সম্প্রচারিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার রেকর্ডও এতে স্থান পেয়েছে। এমনকী, ‘সংবাদ বিচিত্রা’ শীর্ষক নিউজ-রিলও এতে স্থান পেয়েছে। আকাশবাণী সম্প্রচারিত সংবাদ বিচিত্রা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার একটি বড় উৎস ছিল।
দ্বিতীয় সিডির শিরোনাম ‘লিবারেশন অব বাংলাদেশ’। আকাশবাণী দিল্লি থেকে সম্প্রচারিত রেকর্ডগুলো এতে রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর সেনাপতি নিয়াজির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি, ভারতের লোকসভার বিবৃতি এবং বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা এই সিডিতে স্থান পেয়েছে। সরকারিভাবে সিডি দুটি সংরক্ষণ করবে বাংলাদেশ। আগেই বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় আকাশবাণী কলকাতাই ছিল বাংলাদেশের সরকারি বেতারবার্তার দপ্তর। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড সেখানে জমা হয়েছিল।