ঢাকা: মানব পাচারকারীদের প্ররোচনায় দেশে ফিরতে চান না বাংলাদেশিরাও। যেতে চান ইতালি।
উদ্ধারের পর প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে ভাসমান অবস্থায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকাটি তীরে ভিড়তে দেওয়ার আগে এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি চায় তিউনিসিয়া। নৌকায় থাকা বাংলাদেশিদের কবে ফেরত নেওয়া হবে সে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে লিখিতভাবে।
তিউনিসিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। পাশের দেশ লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করে জানা গেছে, মানব পাচারকারীদের প্ররোচনায় আটকে পড়া বাংলাদেশিরাও পণ করেছেন ইতালি যাওয়ার। অন্যদিকে, তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষও নৌকাটি তীরে ভিড়তে দিচ্ছে না। দুই পক্ষের এমন অবস্থানের কারণে আটকে পড়া লোকজনকে নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রেড ক্রিসেন্ট গত মঙ্গলবার জানায়, গত ৩১ মে তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে ৬৪ বাংলাদেশিসহ ৭৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে মিসরের একটি নৌকা। বাকিরা মরক্কো, সুদান ও মিসরের নাগরিক। কিন্তু তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষ নৌকাটিকে তীরে ভেড়ার অনুমতি দিচ্ছে না। এরপর থেকে ওই ৭৫ জনকে নিয়ে সাগরে ভাসমান আছে নৌকাটি।
এ নিয়ে জানতে চাইলে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর এ এস এম আশরাফুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ভূমধ্যসাগরে আটকে পড়া লোকজনের বিষয়টি সুরাহার জন্য ত্রিপোলিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সেকান্দার আলী বুধবার তিউনিসিয়া গেছেন। শুক্রবার নাগাদ তিনি তিউনিসিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মেদিনিনে যাবেন। উপকূলীয় ওই শহরটির কাছেই সাগরে ভাসমান আছে নৌকাটি।
শ্রম কাউন্সেলর জানান, আটকে পড়া লোকজনকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তাঁদের সাক্ষাৎকার নিতে এরই মধ্যে তিউনিসিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রদূত তিউনিসিয়া গিয়ে সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি সুরাহার জন্য কথা বলতে শুরু করেছেন।
তবে তিউনিসিয়ার কূটনৈতিক সূত্র ও রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত দুই দিনে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভূমধ্যসাগর হয়ে মানব পাচারের হার বেড়ে যাওয়ায় তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষ চটে গেছে। বাংলাদেশসহ যেসব দেশের লোকজন আটকে পড়েছেন, তাঁদের নিজেদের দেশে দ্রুত ফেরত পাঠাতে মরিয়া তারা। তাই আটকে পড়া দেশগুলোর কাছে তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সময়সীমাভিত্তিক লিখিত প্রতিশ্রুতি চায় তিউনিসিয়া। এই অনড় অবস্থানের ফলে সর্বশেষ ঘটনার পর প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অভিবাসীবোঝাই নৌকাটিকে উপকূলে ভিড়তে দিচ্ছে না তিউনিসিয়া।
ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিউনিসিয়া যেমন তাদের অবস্থানে অনড়, তেমনি মানব পাচারকারীরাও ইউরোপমুখী অভিবাসীদের দেশে না ফিরতে প্ররোচিত করছেন। তাঁরা আটকে পড়া লোকজনকে বুঝিয়েছেন, তিউনিসিয়া বা অন্য কোনো দেশে আটক হলে ক্ষতি নেই, যে করেই হোক তাঁদের ইউরোপ পাঠানো হবে। ওই প্রলোভনে পড়ে ৩১ মে থেকে তিউনিসিয়ার জলসীমায় আটকে থাকা ৬৪ বাংলাদেশি দেশে না ফেরার ব্যাপারে পণ করেছেন। যেমনটা পণ করে আছেন তিউনিসিয়ায় গত মে মাসে উদ্ধার পাওয়া ৮ জন বাংলাদেশি। ওই সময় নৌকাডুবির পর ১৪ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হলেও মাত্র ৬ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো গেছে। অন্য ৮ জন এখনো তিউনিসিয়ায় আছেন রেড ক্রিসেন্টের তত্ত্বাবধানে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মানব পাচারকারীদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে তাঁরা এ অবস্থান নিয়েছেন। তবে দেশে ফিরিয়ে আনতে তাঁদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’