ঢাকা: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরিসর আরও বড় করতে চান নেতারা। জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তাঁরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলবেন।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় আ স ম আবদুর রবের বাসভবনে দেড় মাস পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে রব সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য পরবর্তী সভা জোটের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের নেতৃত্বে করব। এ আন্দোলনের রূপ হবে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ রূপ। ঐক্যফ্রন্টকে আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক করতে হবে। স্বাধীনতার পক্ষে সরকারবিরোধী যত রাজনৈতিক দল আছে, সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ আমরা এই স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’
আজকের সভায় জোটের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন অসুস্থ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানানো হয়। রব বলেন, তিনি অসুস্থ থাকায় জোটের আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে পরবর্তী সময়ে তাঁদের যে বৈঠক হবে, সেখানে পরবর্তী করণীয় গ্রহণ করবেন নেতারা। জেএসডির সভাপতি বলেন, যেসব প্রতিশ্রুতিতে তাঁরা নির্বাচনে গিয়েছিলেন, তা এখনো আদায় করতে পারেননি। আদায় না করা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন এবং ঐক্য অব্যাহত থাকবে।
ভোট ডাকাতি, নারী-শিশু নির্যাতন, কৃষক ধানের মূল্য না পাওয়া এবং ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণ, বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন আ স ম রব। তিনি বলেন, অন্যায় করলে ধরা পড়বে, বিচার হবে, এ কথাটা ভুলে গেছে বাংলাদেশের মানুষ।
গত ৯ মে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী জোটের অসংগতির কথা জানিয়েছিলেন। ৮ জুনের মধ্যে অসংগতি দূর না হলে তিনি জোট ছাড়বেন বলেও জানান। কাদের সিদ্দিকী জোটের সমস্যা নিয়ে ড. কামাল হোসেন ও জোটকে চিঠি দিয়েছিলেন। আজকের বৈঠকে কাদের সিদ্দীকীর চিঠি প্রসঙ্গে আ স ম রব বলেন, কামাল হোসেন সুস্থ হয়ে বৈঠক না ডাকা পর্যন্ত কাদের সিদ্দিকীর প্রস্তাব স্থগিত থাকবে। কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের আজ বলেন, ‘৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। ৮ তারিখ পর্যন্ত কোনো উত্তর পাই নাই। আজকে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নাই। যেহেতু কামাল হোসেন অসুস্থ, তাই সভাটা মুলতবি রাখা হয়েছে। দলের সভায় আলোচনা করে আরও অপেক্ষা করব। কিছু সময় ধৈর্য ধরতে হবে। যদি সুরাহা হয়, আমরা জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করব। আমরাও চাই জাতীয় ঐক্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যের সেই ভিত শক্তিশালী হয় নাই।’
দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য দরকার। এখনকার ঐক্যফ্রন্টের চেয়ে সুদৃঢ় ঐক্য দরকার। সেটা করতে চাই। তবে এখন পর্যন্ত জাতির প্রত্যাশা ঐক্যফ্রন্ট পূরণ করতে পারেনি বলে তিনি জানান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জোট টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। সংবাদ সম্মেলন আর আলোচনা সভা করে ঐক্যফ্রন্ট টিকে থাকবে না। মাঠে নামতে হবে, এ বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হয়। জোটের এই নেতা জানান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বৈঠকে বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক সময় কথা বলা হয়। তিনি অন্যদের কাছে হতাশা না ছড়ানোর আবেদন জানান। জোটের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনার অনুরোধ করেন।