গাইবান্ধায় তিন পরিবারের চার সন্তান বিক্রি

Slider নারী ও শিশু বিচিত্র


গাইবান্ধা: তিন কারণে গাইবান্ধার পল্লীতে চার সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে তাদের জন্মদাতা পিতা-মাতা। ঘটনা জানাজানি হলেও
গ্রামবাসী অথবা কারো মাথাব্যথার কারণ হয়নি বরং হাফ ছেড়ে বেঁচে গেছেন তারা। ৪ সন্তানকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছে তিন পিতা-মাতা।

তিন কারণ হলো সংসারে দারিদ্র্যতা, অপরিকল্পিত পরিবার ও লোভ। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভাষার পাড়া গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খড়স্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ। বাঁধের পাশেই বাড়ি ফুলমিয়ার ও মোমিনা বেগমের। অসুখে ফুলমিয়ার মৃত্যু হয়।

তখন তার পেটে ৮ মাসের সন্তান। জন্মের পর নাম রাখেন মোস্তফা। নানির বাড়িতে বড় হচ্ছিল মোস্তফা। কিন্তু মোমিনার সঙ্গে আবার বিয়ে হয় গাইবান্ধা সদর উপজেলার দাড়ারবাতা গ্রামের রফিক মিয়ার। বিয়ের পর রফিক মিয়া মোমিনার কোলের সন্তানকে মেনে নিতে রাজি নয়। তাই সৎ পিতার চাপের মুখে মোমিনা তার কোলের সন্তান মোস্তফাকে বিক্রি করেন তিন হাজার টাকায়। ক্রেতা ওই এলাকার আমজাদ হোসেনের ঘরে বড় হতে থাকেন মোস্তফা। কিন্তু ঘটনাটি জেনে যায় মোস্তফার নানি জয়গুন বেগম। তারপর জয়গুন বেগম তার বিক্রি হওয়া নাতিকে আনতে যায়। কিন্তু বাদসাধে ক্রেতারা। বলেন ২০ হাজার টাকা দিয়ে নাতিকে নিয়ে যাও। বাড়ি ফিরে জয়গুন বেগম সুদের ওপর ২০ হাজার টাকা নিয়ে তা দিয়ে নাতি মোস্তফাকে তার কাছে নিয়ে আসেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের রাজবাড়ি গ্রামের হাবিল মিয়া। নানা রোগে আক্রান্ত। স্ত্রী সন্তানসহ সাত জনের সংসার। গতর খেটে সংসার চালানো কঠিন। তাই নিজের কন্যা সন্তান পাঁচ মাস বয়সের নাজমাকে ৫০ হাজার টাকায় তুলে দেন এক বিত্তবানের হাতে। আর এই টাকায় কিনে নেন একখণ্ড জমি। তাতে ঘর তুলে নিজের আশ্রয় জোটে। হাবিল মিয়ার চোখে মুখে মেয়েকে এক নজর দেখার ইচ্ছা থাকলেও পারে না। তার নাম মুখে নেয়া নিষেধ। আর কোথায় কেমন আছে তাও কেউ জানে না। তবে হাবিল মিয়া বলেন, মেয়ে বিক্রির টাকা দিয়ে জায়গা কিনেছি। সেখানে ওঠেছে ঘরবসতি।

একই উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের দরিদ্র আশরাফুল ইসলাম। টানাটানির সংসার। নিজে দিন মজুরের কাজ করে যা জোটে তাতে অভাব লেগেই থাকে। সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দেয়ার ক্ষমতা না থাকায় তিন বছর আগে দুই কন্যা সন্তানকে বিত্তবান দুই ব্যক্তির হাতে তুলে দেন। বিনিময়ে নেন সামান্য টাকা। এক মেয়েকে পাঁচ হাজার আর অন্য মেয়ের জন্য ১৫ হাজার। তারপর তাদের পিতা-মাতার পরিচয় বদলে যায়। তারপর তাদের ঠিকানাও বদলে যায়। সে কারণে নিজের সন্তানের জন্য মায়া-মমতা থাকলেও দেখা ও কথা বলার সুযোগ নেই। দাবি করা তো দূরের কথা এখন নিজের সন্তানদের দেখলেও হয়তো মেয়ে ও ছেলেকে আর চিনতে পারবেন না।

তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুুল ইসলাম জানান, সন্তান বেচা কেনা ঠিক নয়। যারা একটু বিত্তবান তারা নিজের বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসাবে অগ্রীম টাকা দিয়ে নিয়ে যান। অনেক শর্ত থাকে সেখানে। তাছাড়া বিষয়টি গোটা নদী ও পল্লী এলাকায় খুঁজলে এ রকম সন্তান বিক্রি বলেন আর দত্তক বলেন অনেক পাওয়া যাবে। বিশেষ করে গৃহহীন, নদী ভাঙা ও বাঁধে আশ্রিত পরিবারে সন্তান হস্তান্তর অনেক হয়েছে।

গাইবান্ধার বালাসীঘাটের বিধবা জয়গুন তার মেয়ের সন্তান নাতি মোস্তফাকে বিক্রির পর টাকা ফেরৎ দিয়ে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। এখন নাতি মোস্তফা দারিদ্র্যতার মধ্যেও স্নেহ ভালোবাসায় লালিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *