হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ সোনার ফসল ঈদের আগে ঘরে তুলতে দেখে আশায় বুক বাধতে শুরু করেছেন লালমনিরহাটের কৃষকরা। আশা ছিল এই ধান বিক্রি করে পরিবারের সবাইকে ঈদে নতুন পোশাক কিনে দেবেন কৃষকরা। ধুমধাম করে ঈদ করার ইচ্ছা ছিল কৃষকদের।
কিন্তু বিধিবাম কষ্টের ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ঈদ আনন্দও নিরানন্দে পরিণত হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউপির নিচপাড়া এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা জানি বর্তমানে তাদের মতো কৃষকের কোনো মূল্য নাই।
এজন্য ফসলেরও দাম নেই। স্ত্রী সন্তান, বাবা-মা মিলে ৬ সদস্যের পরিবার। ইচ্ছে ছিল ধান বিক্রি করে পরিবারের ভালভাবে ঈদ উদযাপন করবো। বর্তমানে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সে আশায় গুড়েবালি।
সরকারি ঘোষণা মতে ১হাজার ৪০ টাকা দরে ধান ক্রয় করবে সরকার। সেখানে দাম পছন্দ হলেও পরিমাণে অনেক কম। লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলাসহ ৫টি উপজেলা থেকে মাত্র এক হাজার মেট্রিক টন ধান কিনবে সরকার। যেখানে কৃষক প্রতি সাড়ে ১২ মন হলেও সরকারকে মাত্র দুই হাজার কৃষক ধান দেয়ার সুযোগ পাবে।
যার সিংহভাগ কৃষকই বঞ্চিত হবেন। এরপরেও রাজনৈতিক প্রভাবে প্রকৃত কৃষকরা এ সুযোগ বিগত দিনেও পায়নি। এবারেও না পাওয়ার শঙ্কা আছে বলে কৃষকরা মনে করছেন। এজন্য কৃষকরা শক্ত মনিটরিং দাবী করেন তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউপির ভুল্ল্যারহাট এলাকার আরেক কৃষক মনোয়ার হোসেন নয়ন বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এই বাজারে সেই এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা আসে। ধান আবাদ খরচের ৪ হাজার টাকাই ঘাটতি থাকছে।
এ বছর ঋণ করে ধান আবাদ করে প্রায় অর্ধেক টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে।
মিশনমোড়ের কাপড় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিলন জানায়, জেলায় ধান মারাই শুরু হলেই আমাদের বিক্রি বেড়ে যায়। কিন্তু এবছর ঈদেও আশানুরুপ ক্রেতা নেই মার্কেটগুলোতে। ধানের দাম কম থাকায় কেনাকাটায় আগ্রহ নেই কৃষকদের। ঈদের জন্য বাহারি ডিজাইনের কাপড় নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এবারের ঈদের বাজার তেমন একটা জমবে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভুষন রায় বলেন, এ বছর ৪৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রায় ৩ হাজার হেক্টরেরও বেশি আবাদ হয়েছে। সরকার নির্ধারিত বাজার মূল্যে ধান সংগ্রহ শুরু করলে বাজারে ধানের মূল্য বাড়বে এবং এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন।