আমার মৃত্যুর পর তুই নিজে আমাকে নিতে আসবি খোকা!

Slider টপ নিউজ

ঢাকা: খোকা! রমজান চলছে। জানি প্রিয়তমা স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে খুবই ভালো আছিস। ইফতারের সময় হলে নিশ্চয় খুব আনন্দ করিস সবাইকে নিয়ে। প্রতিবেশীকে জাগিয়ে তুলে সবাই মিলে সেহরিটাও করিস আনন্দে। জানিস, এমন দিন আমারও কাটতো একদিন। টানাটানির সংসারে তুই ই ছিলি সব আমাদের। তুই খুব দস্যি ছিলি। ইফতারির সময় কাছাকাছি হলে বেরিয়ে পরতাম তোর খুঁজে। তোর বাবা তোকে কোলে তুলে না নিয়ে কখনোই ইফতার করেনি। আর রাতে সেহরিতে কত বাহানায়, কতশত চুমোয় তোকে জাগিয়ে তুলতাম দুজন মিলে। আধঘুমে তোর মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে আমরাও খেয়ে নিতাম তৃপ্তির খাবার। নিশ্চয় তুইও তা করিস আমার দাদুভাইদের সাথে।

খোকা জানিস, আজও ইফতারির সময় হলে বৃদ্ধাশ্রমের দেয়াল ঘেরা উঠানে মনের অজান্তে বেরিয়ে পরি তোর খুঁজে। হঠাৎ কেউ ডাক দিলে সম্বিত ফিরে আসে, আমিও ফিরে আসি অন্ধকার ঘরে। সেহরিতে উঠে আজও তোর কথাই আগে ভাবি, অাঁধারে অবিশ্বাসী দুটি হাত আজও তোকে জাগিয়ে তুলতে চায়। বৃদ্ধাশ্রমে বাধা গরুর মতো সয়ে চলেছি সব। যা দেয় তা খেয়েই যাচ্ছে দিন। কোন বায়না নেই, নেই অভিযোগ। খোকা! শরীরটা দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। খুব বেশিদিন হয়তো থাকবোনা। জানিস এখানকার গোরস্থানটা কেবলই কেঁদে মরে যাওয়া মানুষের। এখানে কেবলই হাহাকার, শুন্যতা। এখানে বড় ভয় করে আমার। খোকা! আমার শেষ ইচ্ছে, আপা যেদিন আমার মৃত্যু সংবাদ তোকে দিবে তুই নিজে আমাকে নিতে আসবি। তোর বাবার কবরের পাশে আমায় কবর দিবি। আর কবর থেকে তুই সবার শেষে উঠবি। শেষ ছোঁয়াটা তোরই চাই! অন্তত এই কথাটা রাখিস, বাবা।

২১ মে, ২০১৮
(চিঠিটি কাল্পনিক, ছবিটি মনিপুর বৃদ্ধাশ্রমের এমনি এক মায়ের

সূত্র: স্কুল শিক্ষক ফজর আলীর ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *