ঢাকা: শিম্পাঞ্জি আর মানুষের মধ্যে কেবল ২ শতাংশ পার্থক্য থাকে। আর এই ২ শতাংশ দ্বারা মানুষ শিক্ষা আর সভ্যতার জন্ম দিয়েছে, বদলে দিয়েছে সাগরের গতিপথ, বাতাসকে ভেদ করে ছুঁয়ে দেখেছে আকাশের নীলিমা। বিজ্ঞানীদের মতে এই ২ শতাংশ আর কিছুই নয় তাহলো মানুষের চিন্তার শক্তি এবং অভিব্যক্তি প্রকাশের ক্ষমতা যা মানুষ ব্যতীত অন্য সকল প্রাণির মধ্যে অনুপস্থিত।
যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের মতো জগৎ বিখ্যাতদের তৈরি করতে পারে, যাদের মেধা ও মননের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবী নতুন করে স্বপ্ন দেখে, সেই সকল মানুষ তৈরির কারখানা বাংলাদেশের এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব র্যাঙ্কিয়ে নাম না থাকায় অনেকের মনেই প্রশ্ন- কেন এমনটা হচ্ছে?
উত্তর যাদের দেয়ার কথা তাদের বিশ্লেষণ শোনার পর শিম্পাঞ্জি তত্ত্বের ২ শতাংশ নিয়ে আমি একটু চিন্তাবোধ করি। আমাদের দেশের শিক্ষাবিদ বা সুশীল সমাজের যারা সক্রিয় আছেন, তারা বর্তমানে রাজনীতিক বিশ্লেষণ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত সময় পার করছেন যে, তাদের টেবিলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ফাইলপত্র খুব একটা থাকে না। যা আছে তাও বিভ্রান্তিকর। সম্প্রতি বিশ্ব র্যাঙ্কিয়ে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এই বিষয়ে দেশের দু’জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পৃথক বক্তব্য প্রদান করেন। যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি বা তাদের প্রজ্ঞাময় চিন্তার প্রতিফলন হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
প্রথম সংবাদটি ছিল এই রকম ‘৪৫ হাজার পাউন্ড না দেয়ায় র্যাঙ্কিয়ে নেই ঢাবি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এই বক্তব্য লন্ডনে রেখেছেন বলে অনলাইনভিত্তিক কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। এবং সেইসঙ্গে এই সংবাদের উপর ভিত্তি করে একদল লোক টাইমস হাইয়ার এডুকেশন কার্যালয়ে অনুসন্ধানে গিয়েছিলেন। অনুসন্ধানে তারা জানার চেষ্টা করেছেন, তারা ৪৫ হাজার পাউন্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দাবি করেছিল কিনা?
যদিও প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের বরাত দিয়ে কঠিন ভাষায় এই সংবাদটিকে অসত্য সংবাদ বলে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। যারা এই সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত না করে অতি উৎসাহ নিয়ে অনুসন্ধানে গিয়েছেন তারা নিঃসন্দেহে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন।
দ্বিতীয় সংবাদটি শিরোনাম ছিল ‘র্যাঙ্কিয়ে কেন নেই ঢাবি, কারণ জানালেন বিএনপি নেতা ড. মঈন খান’। এই রকম একটি সংবাদ দেখতে পেলাম যমুনা টিভির অনলাইন সংবাদমাধ্যমে। জনাব মঈন একাডেমিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে জনাব খান তাঁর রাজনৈতিক অবস্থার জায়গা থেকে কথাগুলো বলেছেন। ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার তিনি সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব আজ চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে মূল্যায়ন না করে নিছক দলীয় রাজনৈতিক কর্মী অর্থাৎ ছাত্রলীগের কর্মীকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ভোটার তৈরির চেষ্টা করা হয়, যাতে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখা সম্ভব হয়। এ ছাড়া দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটসহ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার না থাকাকেও র্যাঙ্কিয়ের অন্তরায় হিসেবে দায়ী করেন মঈন খান।
র্যাঙ্কিং বিষয়ে তার পর্যালোচনা সমস্যার গভীরে যেতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না। তার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে একজন সাধারণ ছাত্রও অবগত আছে বলে আমি মনে করি। বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় জনাব মঈন চাইলে মূল বিষয় সামনে নিয়ে এসে রাজনৈতিকভাবেও সরকারকে চাপে রাখতে পারতেন। তিনি যদি প্রশ্ন করতেন, শিক্ষা অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল বিল পাস্ হওয়ার এক বছর পরও কেন সরকার এর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না? তাতে জনগণের কাছে না হোক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কাছে তার বা তার দলের একটি গ্রহণযোগ্যতার জায়গা তৈরি হতো এবং সরকার বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসত।
এই সরকার পরিবর্তন হলে ড. মঈন খান হয়তো একদিন দেশের শিক্ষা মন্ত্রী হবেন। তার সাক্ষাৎকার পরে এটাই মনে হলো ভার্চুয়াল জগৎ ব্যবহার করে। বিশ্বায়নের এই যুগে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে তার সঙ্গে তিনি খুব একটা সম্পর্ক যুক্ত নন। তিনি মন্ত্রী হলে হয়তো লাইব্রেরি নতুন সাজে সাজবে ইন্টারনেটের গতিও হয়তো বাড়বে। সেই দ্রুত গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ছাত্ররা দেখবে টাইমস এডুকেশনের লিস্ট বা অন্যকোন সংস্থার লিস্টে আমাদের একটাও বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
আমি সাধুবাদ জানাই এই দুজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে, যে তারা কিছুটা সময় নিয়ে হলেও বিশ্ব র্যাঙ্কিয়ে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন নেই সেই বিষয়ে চিন্তার অবকাশ পেয়েছেন। আজেবাজে বিষয়ে কথা বলার লোকের অভাব বাংলাদেশে। কিন্তু দেশের মেরুদ- শিক্ষাব্যবস্থা রক্ষাকল্পে কথা দু-চার জনই বলেন। তাদের বলা কথা যাতে বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় একজন নাগরিক হিসেবে এটাই আমার আশা।
এই বার মূল ঘটনায় আসা যাক। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কিছু স্মৃতি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, যা থেকে হয়তো কিছুটা পরিষ্কার হবে। আসলে কি কারণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গোল তালিকায় জায়গা পাচ্ছে না? বা কীভাবে পেতে পারতো।
বিলেতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মুখপত্র প্রাচীন পত্রিকা জনমত পরিদর্শনে এসেছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সম্ভত সময়টা ছিল ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। শিক্ষামন্ত্রী দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন সেই দিন বিলেতের সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে।
তার আলোচনায় স্থান পাচ্ছিল বিভিন্ন সমস্যা এবং সম্ভাবনার বাংলাদেশ। বলেছিলেন জ্বলে উঠবেই এই দেশ একদিন, দরকার সৎ এবং শিক্ষিত নেতৃত্ব।
সাংবাদিকদের করা প্রশ্ন ধৈর্যসহকারে শুনে উত্তর দিয়েছিলেন সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রশংসামূলক এবং ইতিবাচক আলোচনার এই মাহফিলে আমি জানতে চেয়েছিলাম, বিশ্ব র্যাঙ্কিয়ে নেই কেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম? এটা কার ব্যর্থতা বিশ্ববিদ্যালয়ের, ছাত্রদের নাকি সরকারের?
এইরকম প্রশ্নের জন্য তিনি হয়তো প্রস্তুত ছিলেন না, উত্তরটা ছিল অনেকটা রাজনৈতিক ভঙ্গিমার। তিনি বললেন, আমাদের সরকার কাজ করছে আশা করি অতি দ্রুত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র্যাঙ্কিয়ে দেখা যাবে। আবার অনুমতি নিয়ে আমি বললাম দেখুন বাংলাদেশে অনেক আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং পড়ালেখার মানও অনেক ভালো, আমাদের ছাত্ররা বাংলাদেশের এই সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি হয়ে এসে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে এবং ভালো রেজাল্ট করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালকেভালো র্যাঙ্কিং পেতে সহযোগিতা করছে কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রোডাকশন, যারা এই ছাত্রদের তৈরি করলো খুবভালো মানের ছাত্র হিসেবে তাদের কে কেন খুঁজে পাওয়া যায় না বিশ্ব র্যাঙ্কিয়ে?
তিনি বললেন তারা তো আমাদের কাছে আসে না এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোনো তথ্য চায় না, যার কারণে এমনটি হচ্ছে। আমি বললাম, মাননীয় মন্ত্রী আমি লন্ডনে একটি এডুকেশন সেন্টার পরিচালনায় সহায়তা করি এবং আমি যতটুকু জানি তার (International Network for Quality Assurance Agencies in Higher Education -INQAAHE) আপনাদের কাছে আসবে না বা তারা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে না। INQAAHE এই সংগঠনটি মূলত ভৌগোলিক অঞ্চল ভিত্তিক তাদের নির্দিষ্ট সহযোগী সংগঠনের কাছ থেকে কেবল তথ্য গ্রহণ করে থাকে। যেমন এশিয়া মহাদেশের বিশবিদ্যালয়ের গুণগত মান যাচাইয়ে জন্য তথ্য আদান প্রদান করে থাকে APQN (Asia-Pacific Quality Network) এবং AQAN (ASEAN Quality Assurance Network).
পাঠক আপনাদের অবগতির জন্য বলছি, আপনারা যদি একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে টাইমস হায়ার এডুকেশন, রাউন্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং, কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং এই সকল সংগঠন কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা প্রায় সমান যেহেতু টাইমস হায়ার এডুকেশন ব্রিটিশভিত্তিক হওয়ায় এশিয়ান ছাত্রদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যাচাইয়ের সহজ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত এবং জনপ্রিয়। এই সকল অনলাইন নির্ভরশীল সংগঠনগুলো প্রকাশিত তালিকার সকল তত্ত্ব সংগ্রহ করে থাকেন INQAAHE (International Network for Quality Assurance Agencies in Higher Education)-এর মতো সংগঠনের কাছ থেকে।
কারণ তালিকা প্রকাশকারী সংগঠনগুলোকে আন্তর্জাতিক তথ্য সংরক্ষণ আইন মেনে কাজ করতে হয় যার ফলে তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের।
তাহলে প্রশ্ন হলো তারা কিভাবে কাজ করে? তালিকা প্রকাশকারী সংগঠনগুলো মূলত আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ করে সংস্থা বা তাদের আঞ্চলিক সহযোগীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং আন্তর্জাতিক অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা INQAAHE সেই দেশের বিশবিদ্যালয়েরগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাদের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মান নিরন্ত্রনকারী সংস্থা রয়েছে এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠিত সেই সংস্থা অবশ্যই INQAAHE সকল ধরনের নীতিমালা মেনেই কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাদের নীতিমালার সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ হলেই কেবল তথ্য গ্রহণ করবে এবং যাচাই বাছাইয়ের কাজ করবে INQAAHE .
আবার চলে যাই মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে, উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো আমি আমার মতো করে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে অবহিত করলাম এবং জানতে চাইলাম আন্তর্জাতিক মাননিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার (INQAAHE) সাথে সমন্বয় সাধনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আছে কি না? প্রশ্নটি শেষ করার পর মন্ত্রীমহোদয়ের আগ্রহের বস্তুতে আমি যে ক্ষণিকের তরে আসতে পেরেছি সেটা অনুধাবন করতে পারলাম। তিনি বিব্রত হলেন না বরং বেশ আগ্রহ নিয়ে অরাজনৈতিক আলোচনার সূত্রপাত করলেন। এতক্ষণ ভাসা ভাসা উত্তর দিলেও পরে বললেন মন খুলে।
বললেন, না আমাদের দেশে এরকম কিছু এখনো গড়ে উঠেনি। বিষয়টা নিয়ে আমি কাজ করছি খুব একটা সারা পাচ্ছি না। আমাদের রাজনীতি লোক দেখানো উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই দৃশ্যমান উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত জনগণকে দেখাবে রাস্তা করেছি ব্রিজ করেছি, স্কুল সরকারি করেছি। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার এই সকল নীরব বিপ্লবের পথকে কেউ খুলতে চান না। তবে আমি এটি বাস্তবায়নে জোর প্রচেষ্টা চালাবো কথা দিলাম। সেই দিন আমি আর কথা বাড়ালাম না।
মন্ত্রী সাহেব কথা রাখলেন, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সংসদে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পাসের প্রস্তাব করেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। ১২ই ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদের উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৮টি সরকারি ও ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আইনটি কার্যকর হলে সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই কাউন্সিলের স্বীকৃতি পেতে হবে। বিলে বলা আছে, একজন চেয়ারম্যান, চারজন পূর্ণকালীন ও আটজন খ-কালীন সদস্যের সমন্বয়ে কাউন্সিল গঠন করা হবে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, অধ্যাপক হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন। এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, অধ্যাপক হিসেবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি সদস্য হবেন।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ‘কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে কনফিডেন্স সার্টিফিকেট বা ক্ষেত্রমত অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট প্রদান, স্থগিত বা বাতিল করবে।’
সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট সবার অবগতির জন্য কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। অ্যাক্রেডিটেশন সনদ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান অ্যাক্রেডিটেশনপ্রাপ্ত বলে প্রচার করতে পারবে না, বলা হয়েছে বিলে।
এই বিলটি পাস হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি লন্ডনের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল (চ্যানেল এস) খুব গুরুত্বসহকারে সংবাদটি প্রচার করে যেহেতু সাংবাদিকদের সামনে আমি এই বিষয়টি উপস্থাপন করি তাই আমার একটি ক্ষুদ্র সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হলো তার পরেও কেন স্থান পেলো না বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তর খুবই সোজা। বিলটি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে নিশ্চয় ফাইল চাপায় তলিয়ে গেছে কোটি কোটি ছাত্ররে ভাগ্য সম্পর্কৃত ‘বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বিল-২০১৭।
তাই আমাদের সকলের উচিত এই বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যাতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অতি দ্রুত তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতিযোগিতায় আসতে সুযোগ সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশের নন্দিত শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ একটি অনুষ্ঠানে খুব ভর্ৎসনা করেছিলেন সেই সকল সুশিক্ষিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের যারা বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করে। বাংলাদেশকে ভুলে যায়। তিনি বলেছিলেন, যারা দেশ থেকে অনেক কিছু নিলো বিনিময়ের কিছুই দিলো না। প্রয়োজনে তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বাতিল করা উচিত।
স্যার আমি আপনার আবেগের জায়গাটির প্রতি সম্মান রেখেই বলছি আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তৈরি সেই ছাত্রটি প্রথমেই ধাক্কা খায় যখন বাংলাদেশের সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করে এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন সেই ছাত্রটিকে ফাউন্ডেশন কোর্স করার কথা বলে। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাটিফিকেট অনেক সময় তারা (NARIC – https:/ww/w.naric.org.uk/naric/) রেকগনাইজেশন পর্যন্ত করে না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ছাত্রদের সেই সমস্যা কেন হয় না তাকি আপনি জানেন স্যার? কারণ আমাদের সরকার যে কাজ ২০১৭ সালে করেছে উচ্চ শিক্ষার প্রসারের জন্য তা ভারত অনেক আগেই করে রেখেছে। তাই আপনার চোখে যে দস্যি ছেলে সে হয়তো দেশে পরিচালকদের এই অপারগতাকে মেনে নিয়ে নীরব হয়ে বিদেশে পরে আছে এক বুক অভিমান নিয়ে।
লেখক পরিচিতি: চেয়ারম্যান কমিউনিটি হাইয়ার এডুকেশন ফাউন্ডেশন, ইউকে। সাংবাদিক, টিভি উপস্থাপক।