ঢাকা: ঈদের ছুটিতে বিদেশ ভ্রমণে ছুটছেন বাংলাদেশিরা। এবার ঈদের ছুটি একটু দীর্ঘ হওয়ায় বিদেশ ভ্রমণে আগ্রহ বেড়েছে অনেকের। অবশ্য গত ১০ বছরে দেশের বাইরে ঈদ করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। এবার অন্তত ছয় লাখ বাংলাদেশী ঈদের ছুটিতে বিদেশ ভ্রমণে যাবেন বলে ট্রাভেল এজেন্সি সূত্র জানিয়েছে। অনেক বাংলাদেশী বিদেশে গেলেও কমেছে দেশে আসা পর্যটকের সংখ্যা। যদিও দেশের মধ্যে ভ্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। ট্যুর অপারেটর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই ঈদের ছুটি কাটাতে বাংলাদেশী পর্যটকরা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। বিত্তবানরা যাচ্ছেন তুরস্কসহ ইউরোপের গন্তব্যগুলোতে। তবে হঠাৎ করেই বাংলাদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য।
মূলত ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় এ বছর ঈদের ছুটি কাটাতে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় গন্তব্যে পরিনত হয়েছে। খাত সংশিষ্টরা বলছেন, এ বছর ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে যেতে বাংলাদেশী পর্যটকরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এর একটি বড় কারণ এবার এক সঙ্গে অনেক লম্বা ছুটি পড়েছে। একই সঙ্গে দেশের পর্যটন স্থানগুলো ঘুরে দেখার পর পর্যটকদের মধ্যে নতুন জায়গা দেখার আগ্রহ বাড়ছে। মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশীদের মধ্যে দেশের বাইরে ঈদ করার প্রবণতা বেড়েছে। গত বছর ঈদের ছুটিতে শুধু থাইল্যান্ডেই বেড়াতে গিয়েছিল ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি। এ বছরও থাইল্যান্ডের পাশাপাশি পরিবারের সবাই মিলে যাবেন পাতায়া, বালির মতো দর্শনীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে।
ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশিরা বরাবরের মতই নেপাল, ভূটান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। একই সঙ্গে সাধারণত মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত মিশরেও ভ্রমণের জন্য বুকিং দিয়েছেন। পাশাপাশি উচ্চবিত্তরা এ বছর তুরস্কসহ ইউরোপের দেশগুলোর ভ্রমণ প্যাকেজ বেশি নিয়েছেন। রফিকুল ইসলাম দিপু ভারতে গার্মেন্টে তৈরি কাপড়ের ব্যবসা করেন। তার ভারতীয় পার্টি এরই মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেও দিপুর যাওয়া হয়নি। তাই বেশি ছুটি বলে ঈদের সময়টা বেছে নিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার পাঁচ দিন থাকা হবে। তামান্না খান কাজ করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। ঈদ-উল আযহা তিনি দেশের বাইরে উদযাপন করেন। এবার ঈদুল ফিতরে মা বাবাকে নিয়ে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে।
ভ্যালেন্সিয়া ট্রাভেলসের ভিসা বিভাগের প্রধান কামাল হোসেন জানান, এবার মানুষের দেশের বাইরে যাওয়ার হার একটু কম দেখা যাচ্ছে। দুই তিন বছর আগে ঈদের এক মাস আগে থেকে সিঙ্গাপুর, থ্যাইল্যান্ডের টিকিট সংকট দেখা যেত। এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। কারণ হয়তবা মানুষের হাতে টাকা কম। ঈদকে সামনে রেখে বিদেশ থেকে অনেকই দেশে আসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে। এবার সে পরিমাণটাও কম। এবছর তার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে সিঙ্গাপুর, বালি, থাইল্যান্ডে মানুষ বেশি যাচ্ছে বলে জানান তিনি। এর বাইরে কিছু মানুষ যাচ্ছে ইউরোপে। গত বছর যারা এশিয়ার দেশে ঘুরেছেন তাদের প্রায় ৫০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ এবার ইউরোপ-আমেরিকা যাচ্ছেন। গ্রীষ্মকাল থাকায় এবার ইউরোপ-আমেরিকাতে বেশি মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন।
টোয়াবের প্রেসিডেন্ট তৌফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, সারা বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ দেশের বাইরে ভ্রমণ করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করে ঈদের এই লম্বা ছুটিতে। দেশের কিছু কিছু এয়ারলাইন্স বিদেশি কিছু হোটেলের সঙ্গে যৌথভাবে এসময় প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করে। আমাদের দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি যায় ভারতে। গত বছর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশ এখন প্রথম স্থানে আছে। প্রতিদিন সাড়ে ছয় হাজার মানুষ ভারতের ভিসা পায়। সেই মতে বছরে ১৫ লাখ লোক ভারত যায়। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে কলকাতা যাওয়া কক্সবাজার থেকেও সুলভ। তাই দেশের বাইরে ভ্রমণের কথা এলে আমাদের ভারতের কথাই প্রথম আসে। তিনি বলেন, শুধু অবকাশ নয় এখন মানুষের হাতে টাকা আছে বলেই তারা দেশের বাইরে বেড়ানোর কথা ভাবতে পারেন। দেশের মধ্যেও প্রতিবছর ৫০ হাজার মানুষ ভ্রমণ করে। তবে বিদেশে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের দেশে আসা এবং দেশের মধ্যে ভ্রমণ করাকে উৎসাহিত করতে হবে।
একই কথা বলেন, ট্যুরিজম ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিডাব) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জামিউল আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতি বছর ২৫ লাখ মানুষ দেশের বাইরে ভ্রমণ করলেও বিদেশ থেকে দেশে আসে এক লাখের কিছু বেশি। আমাদের এই দিককে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দর্শনীয় স্থানগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের নাইট লাইভ করতে হবে। যা নেই। একজন ট্যুরিস্ট ২৪ ঘণ্টার ১৬ ঘণ্টা বেড়ায়। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের অধ্যাপক রাশেদুল হাসান বলেন, কোনো একটি বিশেষ সময়কে কেন্দ্র করে ভিনদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছে না বাংলাদেশ কথাটা সত্যি। এ বিষয়ে সরকারে দায়িত্ব হলো, নীতি করা। কিভাবে ট্যুরিজমকে আকর্ষণীয় করা যায় তা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে।