সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে সরকারী ধান সংগ্রহে যুবলীগ নেতার বাধা এবং ইউএনও’র সঙ্গে অশোভন আচারণ করায় মামলা হলেও ৪ দিনেও কোন আসামী গ্রেপ্তার হয়নি। বেলকুচির ইউএনও এসএম সাইফুর রহমান বুধবার রাতে থানাায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা, পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি আরমান, ছাত্রলীগের বহিস্কৃত নেতা রিয়াদ হোসেন, যুবলীগ নেতা রিপন, সাইফুল, জহুরুল এবং সোহাগসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
নিজের করা তালিকায় ধান সংগ্রহ না করায় বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা দলবল নিয়ে গিয়ে ইউএনওকে তার অফিসে গিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
রেজা’র উত্থান যেভাবে:
বেলকুচিতে আওয়ামী রাজনীতি এক আতঙ্কের নাম সাজ্জাদুল হক রেজা। নিজের সুবিধার জন্য তিনি সবকিছুই করতে পারেন। তার রোষানল থেকে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ব্যবসায়ী ও দলীয় নেতাকর্মী কেউ বাদ পড়েননি। সর্বশেষ আক্রান্ত হয়েছেন ইউএনও। আপন বড় ভাই নুরুল ইসলাম সাজেদুল আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ বিশ্বাসের মেয়েকে বিয়ে করার পর থেকেই বিশ্বাস পরিবারের সঙ্গে সাজ্জাদুল হক রেজার সখ্যতা গড়ে উঠে। তালই (বড় ভাইয়ের শ্বশুর) আর মালই (বড় ভাইয়ের শ্বাশুড়ি) এর ছত্রছায়ায় দলের পদ পদবী পেতে থাকেন রেজা। দীর্ঘদিন এক সঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগ আর যুবলীগের আহবায়কের পদ নিজের দখলে রাখেন। মাঝখানে ছাত্রলীগের পদ ছাড়লেও রয়েছেন যুবলীগে। আওয়ামী লীগ টানা ৩য় বার সরকার গঠনের প্রথমবার আবদুল লতিফ বিশ্বাস মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী ছিলেন।
মন্ত্রীপতœী আশানুর বিশ্বাস প্রথমে ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান, পরে পৌর মেয়র। আর পুত্রা রেজা ছিল তাদের একমাত্র সিপাহশালা। মাঠপর্যায়ের দলের অনেক কিছুই তখন রেজা নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমান সরকারের ২য় মেয়াদে বেলকুচি-চৌহালী আসনে মনোনয়ন পান শিল্পপতি আবদুুল মজিদ মন্ডল। বাদ পড়েন আবদুল লতিফ বিশ্বাস। এ অবস্থায়ও প্রায় আড়াই বছর রেজা তার তাঐ লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গেই ছিলেন। সে সময় একাধিকবার এমপি মজিদ মন্ডলের গাড়ি ভাঙচুর ও দলের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন রেজা। একপর্যায়ে এমপি মজিদ মন্ডলের সঙ্গে রেজার সখ্যতা গড়ে ওঠে। তাই তালই আর মালই এর ভালবাসা ভূলে গিয়ে তাদের সঙ্গে দ্বন্ধে জড়াতে থাকে রেজা। তার নেতৃত্বেই পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাসের উপরে হামলা চালানো হয়।
ওই ঘটনায় মামলা হলে রেজাকে হাজতও খাটতে হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে এসে রেজা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তার তালই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যেতে বাধা দেয়া হয়। কোন স্থানে লতিফ বিশ্বাস মিটিং ডাকলে রেজা তার সর্মথকদের দিয়ে সেখানে পাল্টা মিটিং ডেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো। এ অবস্থায় সরকারের বর্তমান মেয়াদে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাস আবারও মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন মজিদ মন্ডলের ছেলে আব্দুল মোমিন মন্ডল। তাই যুবলীগ নেতা রেজা হয়ে অপ্রতিরোধ্য। প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে রেজা বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে তৃণমুলের ভোটে জয়ীও হন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি মোহাম্মদ আলী আকন্দকে পুনরায় মনোনয়ন দেন।
এরপর রেজা তার আপন বড়ভাই ছাত্রদলের সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম সাজেদুলকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করান। এখানে বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোশারফ হোসেনের ছোট ভাই সিরাজুল ইসলামও নির্বাচনে অংশ নেন। ভোটের মাঠে ভাইকে জেতাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায় রেজা। ভোট গ্রহণ শেষে গননা চলার সময়ও প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। গভীর রাত পর্যন্ত ভোট গনণায় সরকারী স্কোর বোর্ডে ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী সিরাজলু ইসলাম এগিয়ে ছিল। ওই অবস্থায় গভীর রাতে জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের ডেকে এনে রেজার ভাই নুরুল ইসলাম সাজেদুলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তখন প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয় কম্পিউটার টাইপ ভুলের কারনে সিরাজুল ভুলক্রমে এগিয়ে ছিল। এ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের কারণে ধরাশয়ী হয় নৌকা। ফলাফল বর্জন করে সিরাজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন ও সড়ক অবরোধ কর্মসুচি পালন করে পুনরায় ভোটের দাবি করলেও তাতে কোন সুফল পাননি তিনি।
যুবলীগ নেতা রেজা বেলকুচি-চৌহালীর বর্তমান এমপি আবদুল মোমিন মন্ডলের আর্শিবাদপুষ্ট, তার আপন ভাই নুরুল ইসলাম সাজেদুল উপজেলা চেয়ারম্যান আর সে নিজে যুবলীগের আহবায়ক। যে কারনে বেলকুচির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এখন রেজা’র হাতে। তাইতো নিজের দেয়া তালিকায় ধান সংগ্রহ করতে অশোভন আচরণ করে ইউএনওকে চাপ দিচ্ছিলেন রেজা। কিন্তু বিধিবাম ইউএনও মামলা করায় দলবল নিয়ে রেজাকে এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আর রেজার নানা অপকর্ম এখন বেলকুচিসহ সারা জেলায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।