বগুড়া: বগুড়া-৬ (সদর ) আসনের উপনির্বাচনে নেতা-কর্মীদের বহর নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বড় দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
আজ বেলা একটার দিকে শহরের সাতমাথা এলাকা থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে শতাধিক নেতা-কর্মীর বহর নিয়ে খান্দার এলাকায় জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক টি জামান নিকেতা । এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা দুইটার দিকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ অর্ধশত নেতা-কর্মী সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জি এম সিরাজ, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এ কে এম মাহবুবর রহমান এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। তবে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেও শেষ পর্যন্ত তা জমা দেননি জেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন। অন্যদিকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বাক্ষর না পাওয়ায় তা জমা দেওয়া হয়নি। বিএনপির নেতাদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় অনুপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।
বগুড়ার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসেন বলেন, আগামী ২৪ জুন অনুষ্ঠেয় বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের টি জামান নিকেতা, বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ,এ কে এম মাহবুবর রহমান ও রেজাউল করিম বাদশা, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ওমর, বাংলাদেশ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মনসুর রহমান, মুসলিম লীগের প্রার্থী মুফতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ, জাফর আলী, আবুল হাসান ও মো. মিনহাজ ।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী টি জামান নিকেতা দুপুরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ নেতা-কর্মীর বহর নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। জমা দেওয়ার সময় মোটরসাইকেলসহ কিছু নেতা-কর্মী কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষা করলেও ভেতরে প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মী ঢুকে পড়েন। এ সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মকবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান, সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, বগুড়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান ও মঞ্জুরুল আলম মোহন, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আসাদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল রাজি জুয়েল, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার ও সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক,সম্পাদক অসীম কুমার প্রমুখ।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে টি জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী ছিলেন। বগুড়ার জনগণ বিপুল ভোটে তাঁকে বিজয়ী করেন। কিন্তু তিনি শপথ না নিয়ে বগুড়াবাসীর সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছেন। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নির্বাচিত হয়ে বগুড়াবাসীর প্রতিনিধি হয়ে সংসদে গিয়ে কথা বলতে চাই। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।’
এদিকে বেলা দুইটার দিকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ও রেজাউল করিম বাদশা। তাঁরা নিজেদের মনোনয়নপত্র ছাড়াও এ কে এম মাহবুবর রহমানের মনোনয়নপত্রও জমা দেন। এ সময় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম সাইফুল ইসলাম ও ফজলুল বারী বেলাল, সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আলী আজগর তালুকদার, আহসানুল তৈয়ব জাকির, এ কে এম তৌহিদুল আলম, মীর শাহে আলম ছাড়াও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হাসান, সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকীসহ বহু নেতা উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বগুড়া-৬ জিয়া পরিবারের আসন। জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। জিয়া পরিবার এবং বগুড়াবাসীর প্রতিনিধি হয়েই সংসদে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর জন্য দাবি জানাতে চাই।’
শো ডাউন নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আজগর তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল। তারা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা-শো ডাউন করে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। তাদের যদি আইন ভঙ্গ না হয়, তবে বিএনপির ভঙ্গ হবে কেন?
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসেন বলেন, কার্যালয়ের বাইরে কে কীভাবে এসেছেন, তা দেখার বিষয় নয়। তবে ভেতরে প্রার্থীদের সঙ্গে নির্দিষ্টসংখ্যক সমর্থকই এসেছেন।
ধানের শীষের দুর্গ খ্যাত এই আসনে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয়ী হন। নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেওয়ায় শূন্য ঘোষিত এই আসনে আগামী ২৪ জুন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্ম বগুড়া জেলায় হওয়ার সুবাদে বগুড়া-৬ (সদর) আসনটি জিয়া পরিবারের জন্য ‘সংরক্ষিত’ আসন হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি একচ্ছত্র দখলে ছিল বিএনপির। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী মজিবুর রহমান এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা চার দফা সাংসদ ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু পরে আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচন হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের মমতাজ উদ্দিন ভোট পান ৭৪ হাজার ৬৩৪।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বিএনপি বয়কট করলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে বিনা ভোটে এ আসনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর।