ঢাকা: আজ সন্ধ্যায় সারাদেশে ঝড় ও বজ্রপাতে মোট ৮জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই ৪ জনের মৃত্যু হয়।
তীব্র কালবৈশাখী ঝড়ে রাজধানীসহ সারাদেশে আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বাইতুল মোকারম মসজিদের গেট ভেঙ্গে মারা গেছে একজন।
শুক্রবার (১৭ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীতে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়।
হঠাৎ ঝড় শুরু হলে বায়তুল মোকাররমের গেটে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য করা প্যান্ডেল ভেঙে পড়ে। এতে আটকা পড়েন প্রায় অর্ধশত মুসল্লি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এসময় এক জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় আহত ২৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক।
মৃত ব্যক্তি হলেন, শফিকুল ইসলাম (২৮)। তার বাবার নাম মৃত জনাব আলী।
শফিকুলের শ্যালক সাইফুল ইসলাম জানান, তারা রাজধানীর কদমতলী পোস্তগোলা এলাকার একটি টায়ার কারখানায় কাজ করেন এবং সেখানেই থাকেন। এদিন তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজে দাঁড়ান। সে সময় ঝড় শুরু হলে প্যান্ডেলটি ভেঙে পড়ে। এতে তারা দুজনই আহত হন।
আহতরা হলেন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শরীফুল ইসলাম, মুসল্লি বদিউজ্জামান রুবেল, বিপ্লব, আব্দুল কুদ্দুস, জানে আলম, শফিকুর রহমান সবুজ, মনির হোসেন, তারেক রহমান, মো. মাসুদ, জহিরুল ইসলাম, সজীব, আজগর হোসেন, আরিফুল ইসলাম, মো. হেলাল উদ্দিন। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন মো. আলাউদ্দিন জানান, এ দুর্ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের চিকিসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে একটা অস্থায়ী প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল। ঝড়ো সেটি ভেঙে পড়লে আটকা পড়েন প্রায় ৫০ জন মুসল্লি। এদের মধ্যে ১৯ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উদ্বারকাজ চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
বাড্ডা: রাজধানীর বাড্ডা এলাকার প্রগতি সরণিতে দেয়াল চাপা পড়ে বুলবুল বিশ্বাস (২৪) ও আনুমানিক ২৮ বছর বয়সী অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
বুলবুলের সহকর্মী মামুন শেখ জানান, ইফতারের পরে প্রাণ-আরএফএল গ্র“পের করপোরেট অফিসের গাড়ি পাকিংয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বুলবুল। হঠাৎ ঝড় শুরু হলে পাকিংয়ের দেয়াল ধসে পড়ে। সে সময় চাপা পড়ে বুলবুল ও এক পথচারীর মৃত্যু হয়।
মামুন শেখ গাবতলী- ডেমরা স্টাফ কোয়াটার রুটে চলাচল করা নূর- এ মক্কা পরিবহন বাসের ওয়ে বিল চেকার।
বুলবুলের মামা রাজিব হোসেন জানান, অছিম পরিবহনের ওয়ে বিল চেকার হিসেবে খন্ডকালীন চাকরি করতেন বুলবুল। তিনি আরও জানান, বুলবুল সরকারি বাঙলা কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র।
বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা দুইজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় আহত আরেক যুবক জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এছাড়া ইফতারের আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর এলাকায় বজ্রপাতে দুইজন নিহতরা হলেন, শ্রীরামপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে রেজাউল হক (৪২) ও একই গ্রামের মোতালেবের ছেলে মোশারফ ওরফে মুসা (৪৫)। এক ঘটনায় একই গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে হযরত আলী (৬০) নামে একজন আহত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম ও সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হোসেন জানান, বিকেলে ইউনিয়নের শ্রীরামপুরে মাঠে ধান কাটার সময় ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে গ্রামে ফেরৎ আসার পথে ওই তিনজন বজ্রপাতের শিকার হন। এতে ঘটনাস্থলে দুই জন নিহত ও একজন আহত হন। খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
অপরদিকে একই সময়ে বজ্রপাতে নওগাঁর পোরশা উপজেলার গানুইর গ্রামে মালিপুকুর মাঠে দুই ধানকাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের গানুইর গ্রামের আজাদ হোসেনের ছেলে শফিনুর রহমান বিষু (৩২) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার পিঠাইল গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে হাসান আলী (৩০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাঠে ধান কাটার কাজ করছিলেন শফিনুর রহমান ও হাসান আলীসহ কয়েকজন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এতে শ্রমিকরা মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ করেই বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই শফিনুর রহমান ও হাসান আলী মারা যান। এ সময় বুলবুল নামে আরেকজন আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।