কলকাতা প্রতিনিধি: নির্বাচন কমিশনের আচমকা নির্দেশে কার্যত পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজ্যের এডিজি সিআইডি রাজীব কুমারকে। কমিশনের নির্দেশ মত বৃহষ্পতিবারই তিনি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রিপোর্ট করেছেন। তবে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করে বলেছেন, রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে আদালত আগে যে রক্ষাকবচ দিয়েছেল তা তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে সিবিআই রাজীবকুমারকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা রইল না। তবে আগামী সাতদিনের মধ্যে রাজীবকুমারকে জামিনের জন্য আদালতের দ্বারস্ত হবার সুযোগ দিয়েছে আদালত।
শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করেছেন তিন বিচারপতির বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। গত ২ মে থেকে এই মামলার রায় স্থগিত ছিল। সারদা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন চিটফান্ড মামলার তদন্তের সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই শীর্ষ আদালতে রাজ্য পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ জানিয়ে মামলা করে। সেই মামলার শুনানির সময় সিবিআই একাধিক বার জানায়, সারদা মামলার তদন্তের প্রয়োজনে রাজীব কুমারকে জেরা করা প্রয়োজন। কিন্তু বার বার তাঁকে সমন পাঠানো হলেও তিনি আসেননি। এক পর্যায়ে সিবিআইয়ের অফিসার তার বাড়িতে প্রবেশ করে জেরার করার চেষ্টা করলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার অভিযোগ জানিয়ে ধর্মতলায় মমতা ধরণাতেও বসেছিলেন। পরে সিবিআই আদালতে তাঁদের সওয়ালে হলফনামা দিয়ে অভিযোগ করে যে, রাজীব কুমার সারদা মামলার দায়িত্বে থাকা রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ তদন্দকারী দল (সিট)-এর অন্যতম প্রধান আধিকারিক ছিলেন। সিবিআই অভিযোগ করেছিল, ওই সময়ে সারদা মামলার অনেক তথ্য নষ্ট করা থেকে তথ্য প্রমাণ লোপাট করেছেন রাজীব কুমার। শীর্ষ আদালত সিবিআইয়ের সওয়াল শুনে রাজীব কুমারকে শিলংয়ে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু একই সঙ্গে রাজীব কুমারকে ‘গ্রেপ্তার করা যাবে না’ বলে রক্ষা কবচও দিয়েছিল। শিলংয়ে পাঁচ দিনের জেরা শেষে, সিবিআই সেই জিজ্ঞাসাবাদের রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে আদালতকে জমা দিয়ে রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে জেরার আর্জি জানিয়েছিল। পাল্টা রাজীব কুমার এবং রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল যে, সিবিআইয়ের নাবে অন্তবর্তী অধিকর্তা নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রী এবং মেয়ের বেআইনি আর্থিক লেনদেনের তদন্ত তাঁর নির্দেশে কলকাতা পুলিশ করছে বলেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সিবিআই তাঁকে হেনস্থা করছে। দু’পক্ষের শুনানির শেষে প্রধান বিচারপতির তিন সদস্যের বেঞ্চ তাঁদের রায় স্থগিত রেখেছিলেন। কারণ ওই মামলায় সিবিআইয়ের মূল আর্জি ছিল, রাজীবের রক্ষাকবচ (গ্রেপ্তার করা যাবে না) প্রত্যাহার করুক শীর্ষ আদালত।