৫৪৩ আসন বিশিষ্ট ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ইতিমধ্যেই ৪২৫ আসনে নির্বাচন শেষ। ভোট গ্রহণ বাকী রয়েছে এখনও ১১৮ টি আসনে। সাত পর্বের নির্বাচনে আগামী ১২ মে গোটা দেশে সাতটি রাজ্যের ৫৯ টি লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ।
এ দফায় উত্তরপ্রদেশের (১৪), হরিয়ানা (১০), পশ্চিমবঙ্গ (৮), বিহার (৮), মধ্যপ্রদেশ (৮), ঝাড়খন্ড (৪) এবং রাজধানী দিল্লির ৭ টি আসনে ভোট নেওয়া হবে।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মতে ওই দিন ত্রিপুরা পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্রের ১৬৮টি বুথেও পুনরায় ভোট নেওয়া হবে।
এই দফায় সকলের নজর থাকবে রাজধানী দিল্লির দিকে। কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি (আপ) মধ্যে দীর্ঘ টালবাহানার পরও সেখানে জোট না হওয়ায় সাতটি কেন্দ্রেই ত্রিমুখী লড়াই হবে।
ফলে অন্যদের চেয়ে কিছুটা হলেও বিজেপিই বাড়তি সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া এবারের নির্বাচনে প্রতিটি দলেই ‘তারকা’ প্রার্থীদের ছড়াছড়ি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি ও আপ-এর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখেছিল দিল্লি। শতকরা ৪৬.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এই প্রদেশের ৭টি আসনেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পায় আপ। মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে কংগ্রেসের স্থান হয় তৃতীয়। কিন্তু কংগ্রেস-আপ’এর আসন সমঝোতা হলে ফলাফল যে অন্যরকম হতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দিল্লিতে সবচেয়ে আলোচিত লোকসভা কেন্দ্র হল ‘পূর্ব দিল্লি’। বিজেপি প্রার্থী করেছে সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর-কে, আপের প্রার্থী আতিশি মারলেনা এবং কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন বিশ্বস্ত সঙ্গী অরবিন্দর সিং লাভলি।
চাঁদনিচক কেন্দ্রে এবারও বিজেপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। আপ প্রার্থী পঙ্কজ গুপ্তা, কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন জে.পি.আগরওয়াল।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে পুনরায় বিজেপির প্রার্থী করা হয়েছে গতবারের সাংসদ ও ভোজপুরী অভিনেতা-গায়ক মনোজ তিওয়ারী-কে। মনোজের প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের সিনিয়র নেত্রী ও দিল্লির সবচেয়ে বেশি সময়ের জন্য থাকা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষীত। আপের প্রার্থী দিলীপ পান্ডে।
নয়াদিল্লি কেন্দ্রে গতবারের সাংসদ বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষি লেখির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস প্রার্থী ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মাকেন। আপের প্রার্থী ব্রিজেশ গোয়েল।
উত্তর পশ্চিম কেন্দ্রে গতবারের জয়ী সাংসদ উদিত রাজের পরিবর্তে বিজেপি প্রার্থী করেছে প্রসিদ্ধ গায়ক হনস রাজ হনস-কে। আর বিজেপির টিকিট না পেয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন উদিত। যদিও কংগ্রেসের প্রার্থী রাজেশ লিলোথিয়া, আপ প্রার্থী গুগন রাঙ্গা।
অন্যতম কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল কেন্দ্রটি। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই কেন্দ্রটিতে এবার জোর লড়াই হতে চলেছে। বিজেপির প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর-এর সাথে লড়াই হবে কংগ্রেস প্রার্থী ও রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দ্বিগ্বিজয় সিংয়ের।
উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর আসনে এবার ভাগ্য পরীক্ষা হবে কেন্দ্রীয় শিশু ও কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধীর। ২০১৪ সালে এই আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী ও গান্ধী পরিবারের সদস্য মানেকার পুত্র বরুণ গান্ধী। কিন্তু এবারের নির্বাচনে মা-পুত্রের মধ্যে আসন বদল হয়েছে। সুলতানপুরে প্রার্থী হয়েছেন মানেকা। আর মানেকার জয়ী কেন্দ্র পিলভিট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বরুণ। যদিও সুলতানপুর কেন্দ্রটি কোন রাজনৈতিক দলের কাছেই শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত নয়। এই কেন্দ্রে সপা-বসপা জোট প্রার্থী হয়েছেন চন্দ্রভদ্র সিং, ইউপিএ প্রার্থী সঞ্জয় সিং।
হিন্দিবলয়ের এই রাজ্যের আজমগড় কেন্দ্রে এবার প্রার্থী হয়েছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। ২০১৪ সালে এই আসনটিতে জয়ী হয়েছিলেন অখিলেশের পিতা মুলায়ম সিং যাদব। আর যাদব পরিবারের শক্ত ঘাঁটিতে ধস নামাতে বিজেপি প্রার্থী করেছে জনপ্রিয় ভোজপুরী অভিনেতা দীনেশ লাল যাদবকে।
উত্তরপ্রদেশে এবার প্রতিটি পর্বেই শক্ত লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে। গত লোকসভার নির্বাচনে এরাজ্যে সপা-বসপা-আরএলডি জোট না হওয়ায় রাজ্যটির ৮০ আসনের মধ্যে বিজেপি একাই ৭১ আসনে জয় পেয়েছিল, তার সহযোগী দল আপনা দল পায় দুইটি আসন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সপা-বসপা-আরএলডি’এর মধ্যে আসন সমঝোতা হওয়ার কারণে গেরুয়া শিবিরের কাছে এবারের লড়াই অত সহজ নয়।
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া কেন্দ্রটি এবার নানাদিক থেকে আলোচিত। ১৯৮০ সাল থেকে এই কেন্দ্রটি সিপিআইএম-এর দখলে ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে সিপিআইএম হেভিওয়েট প্রার্থী ও এই কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াকে প্রায় এক লক্ষ ভোটে পরাজিত করে সাংসদ হয়েছিলেন মুনমুন সেন। কিন্তু এবার মুনমুন সেনকে অন্যত্র প্রার্থী করে এখানে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও সিনিয়র রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। সিপিআইএমও তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করে অমিয় পাত্রকে প্রার্থী করেছে। বিজেপির প্রার্থী সুভাষ সরকার।
ঘাটাল কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী গতবারের সাংসদ অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব)। সিপিআই প্রার্থী তপন গাঙ্গুলী, কংগ্রেসের খন্দকার মোহাম্মদ সইফুল্লাহ। বিজেপি প্রার্থী করেছে সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা ভারতী ঘোষকে। ২০১৪ সালে এই আসন থেকেই ২,৬০,৮৯১ ভোটে সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন দেব। কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিল ১,২২,৯২৮ ভোট।
হরিয়ানার সোনিপথ কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুদা। বিজেপির রমেশ চন্দর কৌশিক, জননায়ক জনতা পার্টি (জেজেপি)-র দ্বিগ্বিজয় চৌতালা, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দল প্রার্থী সুরিন্দর চিকারা।
ঝাড়খন্ডের ধানবাদ কেন্দ্রে এবার কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন গেরুয়া শিবিরেরই সাবেক সাংসদ ও ক্রিকেটার র্কীতি আজাদ। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ২০০৯ সাল থেকে এই কেন্দ্রে জিতে আসা পশুপতি নাথ সিং।
মধ্যপ্রদেশের গুনা কেন্দ্রটি বরাবরই গোয়ালিয়রের রাজ পরিবার-সিন্ধিয়াদের দখলে। এই কেন্দ্রের বর্তমান কংগ্রেস সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। একটা সময় তার পিতা মাধবরাও সিন্ধিয়া এবং ঠাকুরমা বিজয়রাজে সিন্ধিয়া। ২০১৪ সালে এই রাজ্য থেকে যে দুইটি আসনে পরাজিত হয়েছিল-তার মধ্যে একটি হল এই গুনা। যদিও বিজেপির কারণেই জ্যোতিরাদিত্য-এর জয়ের মার্জিন প্রায় ৮৬ হাজার ভোট কমেছিল।
পাঁচ বারের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রাধা মোহন সিং ষষ্ট বারের জন্য লড়াই করছেন বিহারের পূর্ব চম্পাহরণ কেন্দ্রে। গতবার এই কেন্দ্র থেকে ২ লাখের বেশি ভোটে আরজেডি প্রার্থী বিনোদ কুমার শ্রীবাস্তবকে হারিয়েছেন। এবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এনডিএ’এর সাবেক শরিক দল আরএলএসপি প্রার্থী আকাশ কুমার সিং।
তার আগে আগামী ১৯ মে শেষ পর্বে আটটি রাজ্যের ৫৯ টি লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ। দেশজুড়ে গণনা আগামী ২৩ মে।