বাজার দরের মতোই সরকারে অস্থিরতা চলছে: রিজভী

Slider রাজনীতি


ঢাকা: সরকার কোন কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বাজার দরের মতোই সরকারের ভেতর চলছে অস্থিরতা। সরকারের সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতির কারণেই দারিদ্রের দুষ্টুচক্রে নিষ্পিষ্ট জনগণ। গণতন্ত্রহীনতা ও দারিদ্রের কারণে প্রান্তিক মানুষগুলোর অধিকার বৃদ্ধির সুযোগ ক্রমাগত নিঃশেষিত হচ্ছে। আজ বেলা পৌনে ১২ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস এই রমজান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক বড় আশীর্বাদ। এই মাস শিক্ষা দেয় সংযম-সৌহার্দ্য-সহনশীলতা-সহমর্মিতা। কিন্তু বাস্তবে সরকারের লোকজনের মাঝে তার কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সিয়াম সাধনার এই মাসে মানুষের চরম কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘবে মিডনাইট নির্বাচনের সরকারের যেন কোন দায়বদ্ধতা নেই।
উদাসীন ভ্রুক্ষেপহীন তারা। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ক্রেতারা।

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে না ঘোষণার পরদিন থেকেই হু হু করে দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে গড়ে তিন থেকে চারগুণ। অন্যদিকে বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্যের বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ না করে প্রমাণ করেছেন নাগরিক সেবায় তারা ব্যর্থ। নিত্যপণ্যের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কারণ না থাকার পরেও দ্রব্য মূল্য ঊর্ধ্বমুখী, যে কারণে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট আরও বেড়ে গেছে। তাদের আয়ের পুরোটাই চলে যাচ্ছে চাল, ডাল, শাক-সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে। তা নিয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বাগাড়ম্বর করে চলেছেন। বাজারে সরকারের কোন নজরদারি নেই। তাদের নজর লুটপাটে।

রিজভী বলেন, রোজার মাসের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন গরু ও খাসির গোস্তের দাম কেজি প্রতি যথাক্রমে ৫২৫ ও ৭৫০ টাকায় বেঁধে দিয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গরুর গোস্ত প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ এবং খাসির গোস্ত ৮০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত খাজনা ও সরকারী লোকজনের চাঁদা আদায়কে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, পশুর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে প্রতি কেজি মাংস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এই চাঁদাবাজির অর্থ যাচ্ছে সরকারের ওপর মহলে। সরকার জিম্মি অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে। কিন্তু সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারণ বাজারের নিয়ন্ত্রকরাই এখন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। গণতন্ত্র ধরাছোঁয়ার বাইরে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ শেষে এখন ভাতের অধিকার এবং ন্যায় বিচারের অধিকার কেড়ে নিতে তৎপর সরকার।

তিনি বলেন, বাজারে রোজার মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির গতির কোন স্পীড লিমিট নেই। রোজার প্রথম দিন কেজি প্রতি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। যা আগের দিন ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, আদা ১১০ টাকা, রসুন ১১০ টাকাসহ আলু ১৯ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলের বাজারও টালমাটাল। সবকিছুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়েছে ছোলা, চিনি, তেল, আটা, ময়দা, বেসন, মুড়ি, চিড়া, গুড় ও আটার।

রিজভী বলেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতিশীল। দেশে গুম, রহস্যময় অন্তর্ধান, খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও অনাচারের হিড়িক চলছে। প্রতিদিন নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে গড়ে ২০ জনের অধিক। প্রতিদিন গড়ে খুনের ঘটনা ঘটছে ১৫ থেকে ২০ জনের অধিক। গার্মেন্টস শিল্পে প্রতিদিন গড়ে ৪ জনের মধ্যে ১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। চলন্ত গাড়ি, বাসাবাড়ী, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন অফিস কোথাও নারী নির্যাতন থেমে নেই। দিনের পর দিন বিচার বহির্ভূত হত্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানসিক রোগীর মতো মানুষ খুনের নেশায় পেয়ে বসেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। পত্রিকার পাতা খুললেই বিচার বহির্ভূত হত্যার হিড়িক দেখা যায়। এই সরকারের আমলে নারী-শিশু নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, শাহিদা রফিক, সহ দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *