দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সহজ জয়

Slider খেলা


ঢাকা: ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। দুজনের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ওপেনিং জুটিতে এসেছিল ১৪৪ রান। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গী করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিলেন সাকিব আল হাসান। ২৬২ রানের টার্গেটে ৩০ বল এবং ৮ উইকেট হাতে রেখেই পৌঁছে যায় টিম টাইগার। যাতে তৃতীয় উইকেট জুটিতে এসেছে ৬৮ রান। সাকিব ৬১ বলে ৬১ এবং মুশফিক ২৫ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ জয়ের চেয়েও এই ম্যাচে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল টাইগারদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং। বিশ্বকাপে এমনটাই দেখতে চাইবে সমর্থকেরা।

ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যক্তিগত ১ রানে ক্যাচ তুলে দিয়ে বেঁচে যান তামিম ইকবাল। দেশসেরা ওপেনার যখন রানের জন্য সংগ্রাম করছিলেন; বিপরীতে হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন সৌম্য। শেষ পর্যন্ত কেমার রোচকে পরপর বাউন্ডারি মেরে হাত খোলেন তামিম। ততক্ষণে ২৬টি ডট বল খেলে ফেলেছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রেখেছেন তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকার। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৪৭ বলে ৭ চার ১ ছক্কায় তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৮ম ফিফটি। এরপরেই ব্যক্তিগত ৫৩ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান তিনি। অপরপ্রান্তে তামিম ফিফটি তুলে নেন অনেক বেশি – ৭৮ বল খেলে। হাঁকান পাঁচটি চার।

চমৎকার ব্যাটিংয়ে বড় জুটি গড়ার পাশাপাশি সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সৌম্য সরকার। তবে ডোয়াইন ব্র্যাভোর দুর্দান্ত একটি ক্যাচে থামতে হলো তাকে। রোস্টন চেইজের বলটি ডিপ মিড উইকেটে পুল করেছিলেন সৌম্য। সেখানে সীমানার ওপর থেকে ক্যাচ নেন ব্র্যাভো। বলটি ধরার পর তার পা দড়ির বাইরে চলে গিয়েছিল। কোনোমতে বলটি ভেতরে ঠেলে নিজেকে সামলে আবারও সেটা তালুবন্দি করেন তিনি। ৬৮ বলে ৯ চার ১ ছক্কায় গড়া সৌম্যর ইনিংসটি থামে ৭৩ রানে। ১১৬ মিনিট ক্রিজে ছিলেন তিনি। ১৪৪ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।

অপর ওপেনার তামিম ইকবালও আজ ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ১১৬ বলে ৭ চারে ৮০ রান করে তিনি গ্যব্রিয়েলের বলে জেসন হোল্ডারের তালুবন্দি হয়েছেন। এর আগে সাকিবের সঙ্গে তার জুটিতে এসেছে ৫২ রান। ততক্ষণে জয়ের পথে বাংলাদেশ। বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান ৫৬ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪১তম হাফ সেঞ্চুরি। এই বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬১ রান তোলে উইন্ডিজ। ব্যাট হাতে ধীর শুরু করলেও একসময় হাত খুলতে শুরু করেন শাই হোপ আর সুনিল অ্যামব্রিস। ৫ বোলার ব্যবহার করে ফেলেছেন অধিনায়ক মাশরাফি; কিন্তু কোনোভাবেই ভাঙা যাচ্ছিল না উইন্ডিজের ওপেনিং জুটি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তিন অংকের জুটির স্বপ্নে যখন ক্যারিবীয়রা বিভোর; তখনই আঘাত হানেন মেহেদী মিরাজ। তরুণ স্পিনারের ঘূর্ণিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দি হন ৫০ বলে ৩৮ রান করা সুনিল অ্যমব্রিস। ৮৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় উইন্ডিজ।

পরের ওভারে এসেই আঘাত হানেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার দুর্দান্ত ঘূর্ণিতে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়েন ডোয়াইন ব্র্যাভো (১)। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া উইন্ডিজকে টেনে তোলেন আরেক ওপেনার শাই হোপ এবং রোস্টন চেইজ। ১২৬ বলে ১০ চার এবং ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন শাই হোপ। আগের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও তিনি ১৭০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। হোপের সেঞ্চুরির পরেই মাশরাফির তোপে ধস নামে ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপে।

টাইগার ক্যাপ্টেনের বলে মুস্তাফিজের তালুবন্দি হন চেইজ (৫১)। ভাঙ্গে ১১৫ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। ফিরতি ওভারে এসেই আবারও আঘাত মাশরাফির। তার বলে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ধরা পড়েন ১০৯ রান করা শাই হোপ। এক বল পরেই টাইগার অধিনায়কের শিকার হন উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার (৪)। সাইফউদ্দিনের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান শন ডারউইচ (৬)। ২ উইকেটে ২০৪ রান থেকে মুহূর্তেই ৬ উইকেটে ২১৯ হয়ে যায় উইন্ডিজের স্কোর।

ম্যাচজুড়ে প্রায় সাড়ে ৮ করে রান দেওয়া মুস্তাফিজের বলে জোনাথন কার্টার (১১) সাকিবের তালুবন্দি হলে সপ্তম উইকেটের পতন হয় ক্যারিবীয়দের। সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার কেমার রোচ (১)। শেষ ওভারে অ্যাশলে নার্সকে (১৯) সাব্বির রহমানের তালুবন্দি করেন মুস্তাফিজ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬১ রানে শেষ হয় উইন্ডিজের ইনিংস। ৪৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার মাশরাফি। ২টি করে নিয়ছেন মুস্তাফিজ-সাইফ। আর একটি করে উইকেট শিকার করেছেন দুই স্পিনার সাকিব আর মিরাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *