হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জে শিশু পার্ক থাকলেও শিশুদের বিনোদনের কোনো সুব্যবস্থা নেই। উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টার সংলগ্ন শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য নির্মিত একমাত্র পার্কটি গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। হয়েছে বখাটেদের আড্ডা।
পার্কটি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন পার হলেও এই শিশু পার্কটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া কখনই লাগেনি। হয়নি কোনো সংস্কার কাজ।
লোহার খেলনাগুলো মরিচা ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পার্কের ফটক ভেঙে গেছে। পার্কটি এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। পার্কের ভাঙা ফটক ভেদ করে গরু-ছাগল ঢুকে পড়ে অনায়াসে। আবার কখনও কখনও সন্ধ্যা হলে বখাটেদের আড্ডাও জমে উঠে।
পার্কের মাঠটি বিভিন্ন আগাছায় ভরে গেছে। শিশুদের কোথাও দারাবার বা খেলা করার কোন উপকরন নেই। ভাঙ্গা গেট দিয়ে অহরহ গরু-ছাগল ঢুকে মলমূত্র ত্যাগ করায় পার্কের পরিবেশ দুষিত হচ্ছে এ ব্যাপারে যেন দেখার কেউ নেই। ফলে কোমল মতি শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের বিনোদন থেকে।
বিগত এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়িত হলে শিশুদের চিত্ত বিনোদনের কথা চিন্তা করে তৎকালীন সরকার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবন সংলগ্ন উত্তর – পুর্ব পাশে উপজেলার কর্মকর্তাদের থাকার কোয়ার্টার এরিয়ার ভিতরে বিনোদনের জন্য একটি শিশু পার্ক স্থাপন করা হয়।
মাঠের ভিতরে শিশুদের চিত্ত বিনোদন এবং খেলার জন্য লোহার দোলনা, মই, ছাতা ও বেঞ্চ নির্মাণ করা হয়। পার্কটি স্থাপনের পর কিছুসময় শিশুদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছিল। তার পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে উপজেলা পরিষদ বাতিল হলে এ পার্কটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
এবং গত ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২য় দফায় রাস্ট্র ক্ষমতায় আসলে উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে পুনরায় উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করলেও আজ অবধি উপজেলা পরিষদের এ শিশু পার্কটি সংস্কারে কোন উদ্দ্যেগ নেয়া হয়নি।
আর সংস্কারের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় আস্তে আস্তে শিশুদের খেলনাগুলো পুরোটাই ধংস হয়ে যায়। অকেজো খেলনাগুলো অনেকটা চুরি হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার প্রাণকেন্দ্র তুষভান্ডার ও তার আশপাশ এলাকাগুলোতে অসংখ্য শিক্ষিত লোকের বসবাস এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্তেও শিশুদের বিনোদন ও খেলাধুলার জন্য আজও কোন উদ্দ্যেগ বাস্তবায়ন করা হয়নি। এবং উপজেলার ভিতরে নির্মিত হয়নি কোন বিনোদন স্পট।
দীর্ঘ ৩৫ বছর কালীগঞ্জ উপজেলা উন্নয়নে পিছিয়ে থাকলেও ২০১৪ সালের দশম সংসদ নিবার্চনের মধ্যদিয়ে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলহাজ নুরুজ্জামান আহমেদ এমপির হাত ধরে অবহেলিত এ উপজেলায় উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে।
মাননীয় সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্ঠা এবং সহযোগিতায় এ উপজেলার শিশু – কিশোরদের খেলাধুলা ও বিনোদনের মনন বিকাশে উপজেলা শিশু পার্কটির পরিধি বিস্তৃত্ব করে পযাপ্ত পরিমান খেলনার উপকরন, ও সৌদর্য বৃদ্ধি করতঃ শেখ রাসেল শিশু পার্ক নামকরনে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহোদয়ের সুদৃস্টি কামনা করেন স্থানীয় অভিভাবকগণ।
উপজেলা কোয়ার্টারের পাশ্ববর্তী এলাকায় বসবাসরত তুষভান্ডার নছর উদ্দিন সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া নাহিয়ান নূর নিতি বলেন, শিশুদের জন্য নির্মিত শিশু পার্কে আমরা যেতে পারছি না।
পার্কটিতে খেলনার কোন উপকরন নেই। নেই পরিস্কার পরিছন্নতা, খেলাধুলার জন্য তেমন পর্যাপ্ত জায়গা। ফলে আমরা বিনোদন বঞ্চিত হচ্ছি এটা আমাদের সাথে খুব অন্যায়।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান জানান শিশুদের কথা বিবেচনা করে শিশুপার্কটি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ কমল কৃষ্ণ সরকার বলেন, কালীগঞ্জে কোন স্টেডিয়াম ও শিশু পার্ক না থাকায় কোমলমতি ছেলেমেয়েরা বিপদগামী হচ্ছে তিনি কালীগঞ্জে একটি স্টেডিয়াম ও উপজেলা শিশু পার্ক সংস্কারের জন্য মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ টি তুষভান্ডার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় ওয়ার্ড মেম্বার কৃষ্ণ চরণ মোহন্ত বলেন, এটি সংস্কার করা দরকার বলে মনে করি।
এ বিষয়ে স্থানীয় জনগন জানান, এলাকায় অনেক চাকুরীজীবি ও শিক্ষিত লোকের বসবাস।
কিন্তুু উপজেলার একমাত্র শিশু পার্কটি স্থাপিত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত শিশুদের বিনোদন ও খেলাধুলার কথা চিন্তা করে কেহই সংস্কার করেছি। তবে এর সংস্কার ও জায়গা বধিতকরন করা দরকার। যাতে আমাদের সবার বাচ্চারা শিশু পার্কটিতে খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ পায়।