ঢাকা: ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। আগামীকাল শুক্রবার বিকেলের দিকে তা ভারতের ওড়িশায় পুরী এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে। এ জন্য ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র এক আতঙ্ক। এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে শনিবার সকালে আঘাত হানতে পারে। এখন তা বাংলাদেশ থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ছামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ফণী যেভাবে এগিয়ে আসছে তা অব্যাহত থাকলে শুক্রবার আঘাত হানবে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে। তারপর তা উপকূল ঘেঁষে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলে যাবে। এতে শনিবার খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর উপকূলে আঘাত হানতে পারে ফণী।
এ অবস্থায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভারতের ওড়িশায় ৪৩টি ট্রেন। উপকূলীয় জেলা পুরী, জগতসিংহপুর, কেন্দ্রাপাড়া, ভাদ্রক, বালাসোর, ময়ুরভঞ্জ, গানজাম, খোরদা, কাট্টাক ও জয়পুরে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির মতো করে শুরু হয়েছে উদ্ধার অভিযান। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার (জেডব্লিউটিসি) পূর্বাভাসে বলেছে, ফণী হলো ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের পর সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ সতর্কতা দিয়েছে এ সময় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় যখন ভূভাগে আঘাত করবে তখন এর বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘন্টায় ১৭৫ কিলোমিটার। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন এনডিটিভি।
এতে বলা হয়েছে, ফণীর আগমনে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এমন এলাকায় আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্ট কার্ড, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এনডিআরএফ) কর্মকর্তাদের, ওড়িশা ডিজঅ্যাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও অগ্নিনির্বাপণকারীদের। ওড়িশায় আগামী তিন দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব স্কুল ও কলেজ। রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা বলেছেন, উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে আট লাখেরও বেশি মানুষকে।
এনডিআরএফ ওড়িশায় মোতায়েন করেছে ২৮টি টিমকে। অন্ধ্র প্রদেশে মোতায়েন করা হয়েছে ১২টি টিম। আর পশ্চিবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে ৬টি টিমকে। এসব টিম ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ৩০টি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা জরুরি প্রয়োজনে বোটে করে অভিযানে নেমে পড়বেন। এর মধ্যে আছে গাছ কাটা বিশেষজ্ঞ। প্রযুুক্তি বিষয়ক সরঞ্জাম সহ টিম।
এতে বলা হয়েছে, পুরী থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে ফণী। তা ঘন্টায় ৬ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়েক প্রস্তুতির বিষয় দেখাশোনা করছেন। তিনি রাজ্যের সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করছেন। আজ সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল থেকে সব মানুষকে উদ্ধারে তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, ভারি বর্ষণের সঙ্গে ১.৫ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ঘটতে পারে।
১৫ই মে পর্যন্ত ওড়িশার সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের সব রকম ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ প্রধান আরপি শর্মা বলেছেন, সব পুলিশের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। যারা ছুটিতে আছেন তাদেরকে অবিলম্বে কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রশাসনিক পর্যায়ের সব সিনিয়র কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম দেখাশোনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব অঞ্চলে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ৮৮০ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র।
ঘূর্ণিঝড় ফণী ওড়িশা বাদেও অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গেও আঘাত হানতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে তা আঘাত হানতে পারে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম ও রাজধানী কলকাতায়। অন্ধ্র প্রদেশে শ্রীকাকুলাম, বিজয়নগ্রাম ও বিশাখাপত্তমে আঘাত হানতে পারে।
বুধবার ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের কারণে ১১টি জেলায় নির্বাচনী আচরণবিধি শিথিল করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।