কালো তালিকা করছে বিওএ

খেলা

pic-18_165503ঘরোয়া কী আন্তর্জাতিক আসরে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা রুখতে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। উচ্ছৃঙ্খল অ্যাথলেট, কর্মকর্তা এমনকি ফেডারেশনগুলোকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার পরিকল্পনা তাদের। শাস্তি স্বরূপ আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে সেই ফেডারেশন, কর্মকর্তা বা অ্যাথলেটদের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। দোষীদের চিহ্নিত এবং শাস্তির ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য ১৮ ডিসেম্বর বিওএর কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মিজানুর রহমান মানুকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটিও করা হয়েছে। কিন্তু কী হবে তাঁদের কাজের পরিধি? মানু জানাচ্ছেন, ‘জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শুরু করে অলিম্পিক বা এশিয়ান গেমসের মতো আন্তর্জাতিক আসর- সব ক্ষেত্রে আমাদের মনিটরিং থাকবে। শৃঙ্খলা ও অনিয়মের ক্ষেত্রে অ্যাথলেট এবং ফেডারেশনগুলো যেন ছাড় না পায়, সেটা আমাদের উদ্দেশ্য। অনেক ক্ষেত্রে অনেক অযোগ্য অ্যাথলেট ও ফেডারেশন আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য বিওএকে চাপ দেয়, তখন এই ডিসিপ্লিনারি ইস্যুগুলো তুলে ধরে তাদের আমরা নিবৃত্ত করতে পারব।’

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এমন একটা সময়ে এই কমিটি করল যখন গেমস থেকে অ্যাথলেট পালানোর অনেক দিনের পুরনো রোগটি আবার ফিরে এসেছে। সর্বশেষ এশিয়ান গেমসে গিয়ে উধাও হয়েছেন কারাতেকা শামীম ওসমান, তার আগে কোরিয়ায় প্রশিক্ষণে গিয়ে নিখোঁজ এক সাইক্লিস্ট ও তাঁর কোচ। বড় বড় আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে অনেক খেলোয়াড়, কর্মকর্তারাই যান ঘোরাঘুরির উদ্দেশ্যে, প্রতিযোগিতায় তাঁদের আগ্রহ থাকে কম। এমনকি প্রতিযোগিতায় যথাযথ নিয়মাবলি না জেনেই অংশ গিয়ে নিতে পুরো কন্টিনজেন্টকে তারা লজ্জায় ফেলেন। এশিয়ান গেমসেই যথাযথ পোশাক না থাকায় এক ফেন্সার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি, তার আগে কমনওয়েলথ গেমস থেকে সাইক্লিস্টকে ফিরতে হয়েছে প্রতিযোগিতার মানের সাইকেল না থাকায়, কমনওয়েলথেই বক্সিং ফেডারেশন এমন এক কোচকে নিয়োগ দিয়েছিল যিনি প্রতিযোগিতার সময় রিংয়ের পাশে যাওয়ারও যোগ্যতা রাখেন না। বিষয়গুলো রোধে এই মুহূর্তে উদ্যোগ না নিলেই নয়। প্রতিযোগিতা রেখে অনেক খেলোয়াড়-কর্মকর্তার কেনাকাটা, ঘোরাঘুরির প্রবণতা রুখতেও কাজ করবে এই কমিটি। বিশৃঙ্খল ও অযোগ্যদের ব্যাপারে শাস্তির সুপারিশ যোগ্য অ্যাথলেট ও ফেডারেশনগুলোর সুযোগ বাড়বে এবং অযোগ্যদের নিরুৎসাহ করবে বলে মনে করেন মানু। সর্বশেষ এশিয়াডের দল থেকে ভারোত্তোলনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা সেটা মানতে চায়নি। নিজেদের উদ্যোগে ইনচিয়নে গিয়ে ভারোত্তোলকদের খেলানোর চেষ্টাও করেছে তারা, এ ঘটনায় বিওএকে সতর্ক করেছে ফেডারেশনগুলোর রাশ টেনে ধরার ব্যাপারে।

অনিয়ম হয় দেশে আন্তর্জাতিক আসরগুলোর প্রস্তুতির বেলায়ও। ‘বিওএ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, কিন্তু দেখা গেল ফেডারেশন সেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঠিকমতো চালাচ্ছে না। অ্যাথলেটদের অবহেলা করছে। অনেক সময় অ্যাথলেটরাও বিশৃঙ্খল আচরণ করে, কর্মকর্তাদের মানতে চায় না- এমন অনেক অভিযোগ আমরা পাই। এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার তো উপায় নেই’ বলছিলেন মানু। তা ছাড়া জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শুরু করে ঘরোয়া যেকোনো আসরেই অ্যাথলেট, ফেডারেশনগুলোর কার্যক্রম থাকবে আতশি কাচের নিচে। যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব, অনিয়মের বিষয়গুলো উঠে যাবে রেকর্ডবুকে। যা পরবর্তীকালে তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মানু।

যদিও বিওএর এই উদ্যোগের শুরুতেই গলদ ধরা পড়ছে অনেকের চোখে। কমিটির বর্তমান সদস্য দুজন, মিজানুর রহমান এবং অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস। মানু বর্তমানে সাইক্লিং ফেডারেশনের সভাপতি, সাইক্লিস্ট পালানোর ঘটনা এবং গ্লাসগোতে তাদের অনিয়মের টাটকা অভিযোগের মুখে সেই ফেডারেশনের সভাপতিকেই ডিসিপ্লিনারি কমিটির দায়িত্ব দেওয়া কতটা যৌক্তিক হয়েছে তা প্রশ্নের মুখে। বিস্তর সমালোচনা আছে অ্যাথলেটিকস সম্পাদক চেঙ্গিসের শৃঙ্খলা নিয়েও, দায়িত্ব পাওয়ার পর টানা সাত মাস তিনি বিদেশে কাটিয়েছেন, এই সাত মাসে একটা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া আর কিছুই হয়নি অ্যাথলেটিকসে। গত কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতিতেও তাঁর ফেডারেশনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। বিওএ খোদ ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটিই সেই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *