ঢাকা: ভিনদেশি পাসপোর্টধারি বিদেশ ফেরত বাংলাদেশিদের নজরদারীতে আনতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এ নির্দেশনা দেশের সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দরগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে নিখোঁজ হওয়া ৪৫ জনের তালিকা বন্দরগুলোতে পাঠানো হয়েছে। সূত্রমতে, সরকারের তরফ থেকে এসব নির্দেশনা পৌঁছার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষগুলো এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট ও শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলায় বিদেশে পড়ুয়া বাংলাদেশের তরুণদের জড়িত থাকার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বিমানবন্দরগুলোতে বাংলাদেশি ছাত্র ও তরুণদের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়।
কারণ সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে খবর রয়েছে, ইংরেজি মাধ্যমে পড়া এবং এরপর উচ্চ শিক্ষার্থে বাংলাদেশের তরুণরা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়ার পর সে দেশের নাগরিকত্ব পান। এরপর তাদের মধ্যে কেউ কেউ জঙ্গিবাদমূলক নানা কাজে জড়িয়ে পড়ে। তখন উন্নত দেশের পাসপোর্ট নিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন তারা পোর্ট এন্ট্রি ভিসা নিয়ে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পড়তে গিয়ে ভিনদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ফিরছেন এমন ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তাই ভিনদেশি পাসপোর্টে তরুণদের পোর্ট এন্ট্রি ভিসা দেয়ার সময় কর্মকর্তারা তার আদ্যোপান্ত যাচাই বাছাই করছেন। এরপর সন্তুষ্ট হলে তবেই ওই সব তরুণদের পোর্ট এন্ট্রি ভিসা দিচ্ছেন। তুরস্কসহ মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশের বিমানবন্দর দিয়ে যেসব বাংলাদেশি তরুণরা যাতায়াত করছেন তাদের উপর নজরদারি করা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে তুরস্কগামীদের ওপর বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যারা তুরস্ক থেকে বাংলাদেশে আসছেন তাদের ওপরও গোয়েন্দারা নজর রাখছেন। ‘বাংলাদেশি জিহাদি গ্রুপ’ নামে একটি উগ্রপন্থী সংগঠনের অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম দেখার পরই এ নির্দেশনা দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক বাংলাদেশি তরুণ আফগানিস্তান, পাকিস্তানে গিয়ে উগ্রপন্থিদের হয়ে যুদ্ধ করেছেন।
এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দেশে ফেরত আসেন। অনেকে বিদেশে গিয়ে ধরা পড়েন। কেউ সেখানে নিহত হন। যারা ফিরেছেন তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যারা এখনও ফেরেননি তাদের সংখ্যা ৪৫ জন। বাড়িতে না ফেরা তরুণদের তালিকা তৈরি করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র্যাব। এরই মধ্যে কাউন্টার টেরোরিজম তাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছে। গত রোববার শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় এ পর্যন্ত ৩৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ হামলায় শ্রীলঙ্কার স্থানীয়রা অংশ নেয় যাদের কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষিত এবং বিদেশে পড়াশোনা করেছে। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের গোয়েন্দারা নজরদারি তৎপরতা আরও বাড়িয়েছেন। সার্বিক বিষয়ে সতর্ক থাকতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।