সৌদি আরবে এক দিনে ৩৭ শিরশ্ছেদ

Slider বিচিত্র


ঢাকা: সৌদি আরবে একদিনে শিরশ্ছেদ ও ক্রুশে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জনকে। তিন বছরের মধ্যে একদিনে এটাই সবচেয়ে বেশি মানুষকে এভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা। সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা ও কট্টরপন্থি চিন্তাভাবনা পোষণ করার অভিযোগে এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে মঙ্গলবার। এ খবর দিয়েছে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন সহ বেশির ভাগ মিডিয়া। এতে বলা হয়, যাদের বিরুদ্ধে এ শাস্তি কার্যকর করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই শিয়া। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর মৃতদেহ ও কর্তিত মস্তক প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা হয়, যাতে অন্যরা তা দেখে অপরাধ থেকে বিরত থাকে।

টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় আঞ্চলিক বিরোধ, জাতিগত সংঘাত আরো বাড়তে পারে। বিশেষ করে সুন্নিপ্রধান সৌদি আরব ও শিয়া প্রধান ইরানের মধ্যে বিরোধ আরো তীব্র হতে পারে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর নিহত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিহতদের ৩৪ জনকে শিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ওয়াশিংটনে গালফ ইন্সটিটিউটের সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী আলী আল আহমেদ। তিনি বলেছেন, সৌদি আরবের ইতিহাসে এটাই একসঙ্গে এত বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও নিশ্চিত করেছে যে, শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই শিয়া। অ্যামনেস্টি আরো বলেছে ‘লজ্জাজনক বিচারের পর’ ওই ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

টাইম ম্যাগাজিন আরো লিখেছে, ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারির পর সৌদি আরবে এক দিনে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা। ১৯৮০ সালের পর প্রথম সৌদি আরব ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক- ৪৭ জন মানুষকে সন্ত্রাস সম্পর্কিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল। তিন বছর আগে হত্যা করা ওই ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন শিয়া। এর মধ্যে ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ের প্রসিদ্ধ ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমর। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর পাকিস্তান থেকে ইরানে তীব্র প্রতিবাদ হয়। তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাস তছনছ করা হয়। সেই সম্পর্ক আর শীতল হয় নি। এখনও তেহরানে সৌদি আরবের ওই দূতাবাস বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলবার যে ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তা এবং ২০১৬ সালের মৃত্যুদণ্ড রাজকীয় ঘোষণায় অনুমোদন দিয়েছিলেন বাদশা সালমান। এখানে উল্লেখ্য, বাদশা সালমানের ছেলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে এতটাই ক্ষমতা দিয়েছেন তিনি যে, তাতে ক্রাউন প্রিন্স ভীষণ বড় বড় এবং নেতৃত্বসুলভ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

সৌদি আরব এবং তার সুন্নিপ্রধান আরব মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক উজ্জীবিত হয়েছেন। ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে নতুন করে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছেন।
মঙ্গলবারের মৃত্যুদণ্ডকে ইরানের প্রতি একটি বার্তা হিসেবে রাজনৈতিক উদ্দেশে মৃত্যুদণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছেন আলী আহমেদ। তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক। তাদের এসব মানুষকে হত্যা করার কথা ছিল না। কিন্তু ইরান বিরোধী মার্কিন তালে তাল মেলানো তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তারা সন্ত্রাসীদের আদর্শ ধারণ করেছিল, সন্ত্রাসীদের সেল গঠন করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল বিশৃংখলা সৃষ্টি করা ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করা। আইন অনুসরণ করে রিয়াদের স্পেশালাইজড ক্রিমিনাল কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা স্থাপনায় বিস্ফোরক নিয়ে হামলা, নিরাপত্তা রক্ষীদের হত্যা, শত্রু সংগঠনগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আলী আহমেদ বলেছেন, যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেন শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা শেখ মোহাম্মদ আল আতিয়াহ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পশ্চিমাঞ্চলীয় জেদ্দায় জাতিগত একটি গ্রুপ সৃষ্টির চেষ্টা। আলী আহমেদ বলেন, সৌদি আরবের সুন্নি সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন শেখ আতিয়াহ। এ ছাড়া তিনি শিয়াদের ছোট ছোট গ্রুপকে নামাজ পড়াতেন।

২০১১ সালে ক্ষমতাসীন তৎকালীন বাদশা আবদুল্লাহর অধীনে সৌদি আরব যখন তখন শেখ আতিয়াহ একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সৌদি আরবের ঐক্যকে শক্তিশালী করতে পারে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে খোলামেলা ও উন্মুক্ত আলোচনা। তিনি জাতীয় সংলাপের আশাও প্রকাশ করেছিলেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে। তাদেরকে ভয়াবহ এক অন্যায় বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য কমপক্ষে ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সহিংস অপরাধের দায়ে। ২০১১ ও ২০১২ সালে সৌদি আরবে শিয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছিল। সেই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে তারা সহিংস অপরাধ করেছেন বলে অভিযুক্ত হয়েছেন। মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে একজন যুবককে। যখন তার বয়স ১৬ বছর তখন তিনি অপরাধ করেছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতাদের সুপ্রিম কাউন্সিল বলেছে, ইসলামিক আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা খালেদ বিন আবদেল করিম আল তুওয়াইজরির মৃতদেহ প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা হয়েছে। সুন্নি উগ্রপন্থি হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে প্রতিজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কি অভিযোগ সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায় নি সরকার। অপরাধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড একটি কার্যকর হাতিয়ার বলে এর পক্ষ অবলম্বন করেছে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *