অপহরণ ও ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত রাজশাহীর মহানগর টেকনিকেল অ্যান্ড বিএম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপন (৪১) ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। তাকে ফেরানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে।
অধ্যক্ষকে ফেরাতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদে থাকা পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ নেওয়াজ। যদিও অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানে ফেরায় আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ও অভিভাবকরা।
ব্যাপক শোডাউন করে এক বছরের মাথায় ১৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানে ফেরেন অধ্যক্ষ। এর একদিন পরই বুধবার (১৭ এপ্রিল) অপহরণ ও ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে প্রকাশ্য বিচারকাজ।
বুধবার দুপুরের পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ মনসুর আলমের আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার এক নম্বর সাক্ষী প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোকসেদ আলী।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোজাফ্ফর হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৪ জুলাই একমাত্র আসামি অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কাটাখালি থানার উপ-পরিদর্শক আসাদ-উল-আলম।
আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ৭/৯ (৪) (খ) ধারার অপরাধ সত্য বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, অধ্যক্ষকে পুনর্বহালে গত ২১ মার্চ নিজ দপ্তরে সভা করেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ নেওয়াজ। ওই সভায় অধ্যক্ষকে পুনর্বহালের পক্ষে মত দেন কমিটির সদস্যরা। সিদ্ধান্ত নেয়ার ১৮ দিন পর গত ১৪ এপ্রিল সভার রেজুলেশন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের হাতে ধরিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
তাতে উল্লেখ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের সার্বিক শৃঙ্খলা, শিক্ষার পরিবেশ, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে, কলেজে ফিরেই ছাত্রীর দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোকসেদ আলীকে ধমক দিয়েছেন। একই সাথে প্রতিষ্ঠানে হাজির অফিস সহকারী মোখলেসুর রহমান। ছুটিতে থাকা শিক্ষক মাসুদ রানা ও রায়হানুল ইসলামকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের। এখন তারাও আতঙ্কিত।
নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ মামলা তুলে নিতে তাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশকে ম্যানেজ করে তার ভাইসহ তাকে নাশকতার দু’টি মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। অধ্যক্ষ স্বপদে ফেরায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
অপহরণ ও ধষর্ণচেষ্টার অভিযোগে গত বছরের ৮ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রী। ওই দিনই অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর চার দিনের মাথায় ১৩ মার্চ অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করে পরিচালনা কমিটি ।
এর আগে ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিজ অফিস কক্ষেই এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে অধ্যক্ষ রিপন। ঘটনার চারদিনের মাথায় ভুক্তভোগী ছাত্রীসহ আরও দুই ছাত্রী ও এক শিক্ষিকা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেন।
সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন আরেক শিক্ষিকা অধ্যক্ষের নামে মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল ওই শিক্ষিকাকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণচেষ্টা চালান অধ্যক্ষ। এ ঘটনা সামনে আনায় ওই শিক্ষিকাকে চাকরিচ্যুত করেন অধ্যক্ষ রিপন।
অধ্যক্ষকে পুনর্বহালের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও জাহিদ নেওয়াজ বলেন, যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। নির্বাহী তদন্তে সেই অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, উচ্চ আদালতের রায়, সরকারি কৌঁসুলির মতামত, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালের মতামতের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির অধ্যক্ষকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিষ্ঠানের সার্বিক শৃঙ্খলা, শিক্ষার পরিবেশ, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ রক্ষায় অধ্যক্ষকে পুনর্বহাল প্রশ্নে জাহিদ নেওয়াজ বলেন, কমিটির এই সিদ্ধান্ত সঠিক। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।