হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ মেধাবী প্রতিবন্ধি এইচএসসি পরীক্ষার্থী বাবুল হোসেন মুখদিয়ে কলম আকড়ে ধরে পরীক্ষা দিচ্ছে। হাত দুটো তার জন্মগত ভাবে বাঁকা এবং সে হাতেও নেই কোন ধরনের শক্তি। তাই বাবুল মুখদিয়ে কলম আকড়ে ধরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আলিমুদ্দিন সরকারী কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
উক্ত প্রতিবন্ধি পরীক্ষার্থী নাম বাবুল হোসেন, পার্শ্ববতি পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ী গ্রামের আব্দুল করিম মিয়ার পুত্র । দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে বাবুল কনিষ্ঠ্য। অপর ছেলে মেয়েদের তুলনায় কনিষ্ঠ্য ছেলে বাবুল প্রতিবন্দি হওয়ায় দুচিন্তায় হাবুডাবু করছিল বাবা মা।
কিন্তু কিছুতেই পিছিয়ে পরেনি বাবুল মুখের ভিতর দাঁত দিয়ে কলম আকড়ে ধরে উত্তরপত্র লিখেই এগিয়ে চলছে। বাস্তবে ইচ্ছা ও মেধা শক্তি দমাতে পারেনি বাবুলকে।
এ অদম্য মেধাবী বাবুল হোসেন প্রাথমিক সমাপনি, জুনিয়র সাটিফিকেট এবং এসএসসি পরীক্ষায় তার মেধার পরিচয় দিয়েছে জিপিএ ৫ পেয়ে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আশায় সে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা টেনিক্যাল বিএম কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। যাহার শ্রেণী রোল নং-০৪।
গত বৃহস্পতিবার উক্ত কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখাগেছে, অন্যান্য সাধারন ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে সীট বেঞ্চে বসে মুখে দাঁত দিয়ে কলম আকড়ে ধরে উত্তর পত্র লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে বাবুল। বড়খাতা টেকনিক্যাল বিএম কলেজের ছাত্র বাবুল এর এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারী কলেজ।
উক্ত পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব রেজাউল করিম প্রধান জুয়েল বলেন, বাবুল সহ আমার এ কেন্দ্রে মোট ৩ জন প্রতিবন্ধি পরিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ নিয়েছে।
প্রতিবন্ধি হিসাবে তাদেরকে বিশেষ সুবিধার আশ্বাস দেওয়া হলেও তারা অন্যান্য সাধারন পরিক্ষার্থীর ন্যায় যথাযত নিয়মেই পরীক্ষা দিচ্ছে। তারা পরীক্ষা শুরু থেকেই অত্যান্ত সাবলিল গতিতে সব কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষায় উত্তর পত্র লিখেছে।
এসময় উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম ও আইসিডি কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন,বাবুল ইসলাম, রফিকুননবী, ও সোহাগ চন্দ্র প্রতিবন্ধি হয়েও পরীক্ষা দেওয়া, শিক্ষা উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার একটি উদাহরণ।
তারা প্রতিবন্ধি হলেও অন্য সাধারন পরীক্ষার্থীর সাথে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তাদের অদ্যম ইচ্ছার করনেই তারা লেখাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছে।
বড়খাতা টেকনিক্যাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ জাহিদ আলম ও উপাধ্যক্ষ তবারক হোসেন জানান, বাবুল প্রতিবন্ধি হওয়া স্বর্তেও নিয়মিত ক্লাস করেছে।
ক্লাস পরীক্ষায় তার ফলাফল সন্তষ্ট জনক ছিল। এইচএসসি পরীক্ষায়ও সে ভাল ফলাফল করবে। পরীক্ষা শেষে কথা হয় বাবুল ইসলাম এর সাথে সে বলে, জন্মগত ভাবে আমার হাত দুইটা এবং হাতের আঙ্গুল গুলো বাঁকা। তাই আমি মুখ দিয়ে কলম আকঁড়ে ধরে পরীক্ষা দিচ্ছি।
তবুও ইচ্ছা শক্তির অভাব নেই আমার। বাবা একজন কৃষক। ভাইবোনদেও সহ আমার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে অনেক কষ্ট হয় তার।
উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে ভাল চাকুরী করব। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবো। এজন্য সকলের নিকট দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করে।