আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন, উত্তরা প্রতিনিধি: রাজধানী তুরাগের ৫৩ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তাগুলো দেখতে যেন ছোট ছোট কাদামাটির খালের মতো দেখায়। নতুন আগন্তুক যে কেহ প্রথম দেখায় রাস্তাগুলোকে কোনভাবেই চলাচলের রাস্তা বলে মানতে চাইবে না। অথচ এমন রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ৫৩ নং ওর্য়াডবাসীর জন্য এ যেন অতিযন্ত্রনার নিত্য চিত্র। মানুষ অসহায়ের মতো করে দিনের পর দিন এভাবে যাতায়াত করছে। যেন কেহ দেখেও দেখে না। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন রাজধানীর সব দিকের মানুষকে পুলকিত করলেও তুরাগের মানুষ যেন সেই আদি যুগেই আছে, এমন কথা বলছিলেন একটি বেসরকারি স্কুলের একজন শিক্ষক। তিনি প্রতিবেদকের কাছে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। প্রায় ২০ বছর বছর থেকে এ এলাকায় বসবাস করলেও রাস্তাঘাটের দূর্ভোগ তার সহে না। তিনি আক্ষেপ করে বলছেন, কেন জানি মনে হয় এখানের মানুষজন কাদামটিতে সহ্য হয়ে গেছে। তা নাহলে এখানের জনপ্রতিনিধিরা রাস্তা গুলো সংস্কারের কোন প্রেসার অনূভব করেন না কেন?
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর উত্তরার নিকটে তুরাগের প্রায় সবকয়টি রাস্তা চলাচলের যোগ্য না, অধিকাংশ সড়কে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু অংশে খোয়া-বালু দিয়ে সাময়িকভাবে মেরামত করা গর্তগুলো পুরনো চেহারায় ফিরে গেছে। রাস্তার দু‘পাশের ভর্তি হয়ে যাওয়া নিষ্কাশন নালার পানি ও গর্তের খোয়া বালু উঠে গোটা এলাকা সয়লাব হয়ে গেছে। রাস্তায় পায়ে হেঁটে চলাচলও করতে পারা যায় না।
বিশেষ করে আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুলের রাস্তাটি গত ১৫দিন থেকে হাটুপানিতে ডুবে আছে। প্রতিষ্ঠানের শত শত ছাত্র-ছাত্রীর চলাচলের কষ্ট কমলমতি শিক্ষার্থীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এ বিষয়ে অত্র স্কুলের প্রধান ফ্যাসিলিটেটর আরিফুর রহমান শামীম এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, গত ১৫ দিন থেকে আমাদের স্কুলের রাস্তাটি পানির নিচে ডুবে আছে। এ জন্য দিন দিন ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিদ্যালয়ে আসা ছেড়ে দিবে ছেলে মেয়েরা, অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের এভাবে স্কুলে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের ৫৩নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কই এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ফুলবাড়িয়া পূর্ব মাথা হতে নলভোগ কবরস্থান রোড, ফুলবাড়িয়া চৌরাস্তা হয়ে সিরাজ মার্কেট পর্যন্ত, সবুজছাতার মোড় হতে সিরাজ মার্কেট চৌরাস্তা, সবুজছাতার মোড় হতে সিরাজ মার্কেট ধরঙ্গাটেক চৌরাস্তা, ধরঙ্গারটেক চৌরাস্তা থেকে আকিজ স্কুল হয়ে নলভোগের রাস্তা, রমজান মার্কেট হতে ধরঙ্গারটেক চৌরাস্তা, রমজান মার্কেট হয়ে বামনার টেক থেকে বটতলা পর্যন্ত রাস্তা, বটতলা ইউ.পি মোড় হয়ে রানাভোলার সবুজ ছাতার মোড় পর্যন্ত রাস্তা, রানাভোলা ৩ নং রোড হয়ে তিতাস পাড়া পর্যন্ত রাস্তা, কবরস্থান রোড হতে তারারটেক পশ্চিম মাথা পর্যন্ত রাস্তা, কবরস্থান হতে হাজী বাড়ী মোড় হয়ে মৌলভীবাড়ী পর্যন্ত রাস্তাগুলো সবই পানির নিচে পড়ে আছে। কোথাও কোথাও রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় হাটুজলে চলাচল করতে গিয়েও মানুষ পড়ছে দূর্ঘটনায়।
ফুলবাড়িয়া সিরাজ মাকের্ট এলাকায় একটি স্কুলে প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থীর নিত্যদিনের ভোগান্তি এখন জলাবদ্ধতা। দিনদিন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা না আসতে পারায় অনেক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রতিভা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও তুরাগ থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ শফিউদ্দিন শফি বলেন, কি বলবো, কিছু বলার ভাষা আমাদের নেই। তুরাগের সব কয়টি রাস্তায় খালে পরিনিত হয়েছে। এ নিয়ে যেন কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।
নয়ানগর থেকে ধরঙ্গারটেক হয়ে রানাভোলা সড়কটির গত ৮ বছরেও কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাই এ সড়কে কেহই কোন কাজে আসতে চায় না। বছরের অধিকাংশ সময় রাস্তাটি ময়লা পানিতে ডুবে থাকে। অথচ তুরাগ থানার এ রাস্তাটি অন্যতম একটি প্রধান রাস্তা। তুরাগের কামারপাড়া থেকে সুয়ারেজ লাইনের জন্য ১০নং সেক্টরের খিদির খাল পর্যন্ত যে লাইনটি আনা হয়েছে সেই সড়কটিরও অবস্থা ভালো নেই। ১২ ফিট সড়কের বুকচিরে আট ফিট ড্রেন করা হয় সুয়ারেজ লাইনের জন্য, কিন্তু মেরামতের সময় সেই ৮ ফিট করার কারণে বাকি ৪ ফিট সড়কও এখন স্বাভাবিক চলাচলের অনুপযোগী। এমন খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলো গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে যেন খালে পরিনত হয়েছে। অপর দিকে অধিকাংশ রাস্তায় সুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় বাসা বাড়ী ব্যবহার করা পানির চাপও বাড়ছে রাস্তায়। এ অবস্থায় বৃষ্টি না থাকলেও রাস্তার পানি সরে না।
এরই মধ্যে বৈশাখের আগমনের আগে আগে অল্প বিস্তর বৃষ্টি শুরু হতেই তুরাগের সব কয়টি প্রধান সড়ক পানিতে ডুবে আছে। এলাকাবাসীর অনেকে অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টি এখনো শুরুই হয়নি, এই অল্প বৃষ্টিতে রাস্তায় হাটুপানি হলে সামনের বর্ষায় কি হবে তাই ভেবে কুল পাচ্ছি না। এছাড়া চলাচলের একাধিক কাঁচা রাস্তা ধসে গেছে। নতুন কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও তার কোন উদ্যেগ আমরা দেখি নাই। সড়কের এ বেহাল দশায় এলাকার গণ্যমান্য কাউকে মাথা ঘামাতেও দেখি না। এ অবস্থায় মানুষের কথা চিন্তা করার যেন কেহ নেই।
তুরাগের রাস্তার বেহাল দশার বিষয়ে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫৩ নং ওয়ার্ড নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হাজী ফিরোজ আলম প্রতিবেদককে বলেন, তুরাগের ভোটার সংখ্যা ২৮,৭০০ হলেও অত্র ৫৩ নং ওয়ার্ডে প্রায় এক লক্ষ লোক বসবাস করে। তুরাগের মানুষের চলাচলের রাস্তাগুলো ঠিক রাখতে শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে হবে না। এ জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিজ উদ্যেগী হয়ে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় এমপি বা সিটি মেয়রের তড়িৎ সহযোগিতা নিতে হবে।
অত্র এলাকার নলভোগ এর স্থায়ী বাসিন্দা ও রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী সেলিম আহম্মেদ বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে ব্যবসায়িক উন্নয়ন ঘটে, রাস্তার বেহাল দশার কারণে সময় মত মালামাল আনা-নেওয়া যেমন কষ্ট সাধ্য তেমনি যাতায়াত খরচ দ্বিগুন যাহা ক্রেতাদের জন্য খরচ বহন করা অস্বাভাবিক হয়ে দাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের
৫৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাছির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ৫৩নং ওয়ার্ডের সব কয়টি রাস্তার অবস্থা ইতিপূর্বে মেয়র মহোদয়কে মৌখিক ও লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তুরাগের রাস্তাঘাট সর্ম্পকে মেয়র মহোদয়ের ভালো ধারনা রয়েছে। আশা করি তিনি এর একটা প্রতিকার করবেন। তিনি আরো বলেন, যতদ্রুত সম্ভব রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও অন্যান্য সমস্যা সমাধান করে জনগনের প্রতিনিধি হয়ে সবসময় জনগনের পাশে থাকতে চাই।