চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে যৌন হয়রানি থেকে বাঁচলেন চবি ছাত্রী, বললেন এই দেশে আর থাকবো না ভাই

Slider চট্টগ্রাম


চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের এক ছাত্রীকে চলন্ত বাসের মধ্যেই যৌন হয়রানি চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সম্ভ্রম বাঁচাতে ওই ছাত্রী চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে নগরীতে ফেরার সময় ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি নিজেই ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে ঘটনাটি জানিয়েছেন।

পরে শুক্রবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাসের চালক ও তার সহকারীকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই ওই ছাত্রী তার ফেসবুক ওয়ালে এ ব্যাপারে একটি পোস্ট দেন।

তাতে তিনি ইংরেজিতে লেখেন, ‘He rushed to me and tied my scarf around my neck so tight that it was literally impossible for me to even breath . I cannot describe to you how and what i felt in that moment.In that initial moment of shock I couldn’t even scream or shout to gather people.I was paralyzed with incredulity and fear at the sheer audacity of the human being behind me.

I had my mobile phone in my right hand. I just hit that man with it so hard i possibly could and maybe it hit his eyes and he left my scarf.I just rushed to the door and jumped off the running bus.The driver started shouting and saying, “maiya ta re dhor shala”.

ওই পোস্টের একেবারে শেষের দিকে তিনি বাংলায় লেখেন, ‘এই দেশে আর থাকবো না ভাই।’

কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, এ ঘটনায় দুপুরে একটি মামলা করেছে ছাত্রীর পরিবার। ইতোমধ্যেই অভিযান শুরু করেছে আমাদের টিম। ওই ঘটনায় বাস, অভিযুক্ত বাস চালক ও সহকারীকে ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে। দ্রুতই আমরা তাদের আটক করতে পারবো।

ওই ছাত্রী তার ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া স্টাটাসে জানান, ১১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে ঘটনাটি ঘটে। বিকেলে ক্লাস শেষ করে তিনি আনুমানিক ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেট হতে ৩নং বাসে ওঠেন। ওই সময় তার এক বন্ধুও ছিল। তবে বাসের পেছন দিকে আসন না থাকায় চালকের সহকারীর সামনের আসনে বসেন তারা। ইতোমধ্যেই তার বন্ধুর কাজ থাকায় জিইসিতে নেমে যায়।

তিনি আরো লেখেন, বাসটি নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় পৌঁছালে ওই ছাত্রী ছাড়া সকল যাত্রী একে একে নেমে যায়। তিনি নিউমার্কেট মোড়ে নামার জন্য বাসেই অবস্থান করছিলেন। এমন সময় তাকে বাসে একা পেয়ে, হঠাৎ বাসটি গন্তব্য বদল করে স্টেশন রোডের দিকে মোড় নেয় এবং গতি বাড়িয়ে দেয়।

হঠাৎ করেই ঠিক কী ঘটছে, সেটা বুঝতে পারছিলেন না ওই ছাত্রী। চালককে বাস থামাতে বললে চালকের সহকারী তার দিকে ছুটে আসে এবং গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। এ সময় দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলে, আত্মরক্ষার্থে ওই ছাত্রী তার ডান হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে চালকের সহকারীকে আঘাত করেন এবং চলন্ত বাস থেকে লাফ দেন।

ওই ছাত্রী আরো লেখেন, ঘটনার সময় বাসের চালকও ‘মাইয়্যাটারে ধর শালা’ বলে সহকারীকে উৎসাহ যোগান। পরে এক রিকশা চালকের সাহায্যে শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে তিনি বাসায় ফিরে যান।

ভোক্তভোগীর পরিবার জানান, ঘটনার সময় সেই বাসের চালকও হেল্পারকে উৎসাহ দিচ্ছিল। তারা হেলপার ও ড্রাইভারকে খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ওই মেয়ের বাবা এবং কোতয়ালি থানার ওসির সঙ্গে আলাপ হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। দোষীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় শাস্তি দেয়া হবে এবং এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।

ঘটনাটি জানার পর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী ছাত্রীর বরাত দিয়ে অর্থনীতি বিভাগের সংগঠন ইয়াং ইকোনমিস্ট সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও ওই বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ঘটনার শিকার ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার আরো তিন বান্ধবী একই বাসে এসেছিলেন। তারা দু’জন মুরাদপুরে ও একজন জিইসি মোড়ে নেমে যান। তারাও থানায় এসেছেন। পুলিশ তরীর মালিক সমিতির নেতাদের ডেকে থানায় এনেছেন। পুলিশ আমাদের আন্তরিক সহযোগিতা করছেন।

ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটলো, যখন ফেনীর সোনাগাজিতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে।

ফেসবুকে লেখা হয় : ‘আমরা যখন নুসরাতের জন্য বিচার চেয়ে শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করছিলাম তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছোট ও বড় বোনেরা ও ভাইয়ারা মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছিলেন। আর অনেকেই বুদ্ধিজীবী চত্বরে মগ্ন ছিলেন এখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ছোট বোন বর্ষা চৌধুরী ও বড় বোন ডালিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদে সবাইকে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। বলা তো যায় না আপনার সিরিয়ালটাও চলে আসতে পারে। … চলে আসুন আগামী ১৬ তারিখ জয় বাংলা চত্বরে এবং আওয়াজ তুলুন। আমরা ১৭-১৮ সেশন শুরু করলাম ইনশাআল্লাহ আপনাদের অংশগ্রহণে এই আন্দোলনটি সফল হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *