ঢাকা: গরিব মানুষের কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য ওই জমি যদি নিতেই হয়, তাহলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী জমির দাম তিন গুণ পরিশোধের পাশাপাশি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত এতটুকু জমিও যেন অধিগ্রহণ করা না হয়। আগামী দিনে সরকারি প্রকল্পে অবশ্যই অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার পাশাপাশি ভবন যাতে খোলামেলাভাবে নির্মাণ করা হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর শেরে-বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ১৮ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলোতে যাঁরা প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের অবশ্যই প্রকল্প এলাকায় থাকতে আবারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পিডিরা যাতে সপরিবারের এলাকায় থাকেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। পুকুর বা জলাশয় ভরাট না করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগুন লাগলে এসব পুকুর ও জলাশয়ের পানি কাজে দেয়। প্রয়োজনে আরো বেশি করে পুকুর খননের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীসহ অন্যরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেকে অনুমোদন পাওয়া সাতটি প্রকল্পে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ছয় হাজার ৬২২ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
গতকাল একনেক সভায় আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে দশ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা ঋণ দেবে চীন। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে। প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার রেলপথকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে দেশের সব রেলপথকে ব্রডগেজে রূপান্তর করতে হবে। তিনি বলেন, অতীতে যারা রেলকে অবহেলা করেছে, তারা অন্যায় করেছে। গতকাল একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ, ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাগুরা-শ্রীপুর জেলা মহাসড়ক বাঁক সরলীকরণসহ সম্প্রসারণ, ১৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নতুন কার্যালয় ভবন ও অডিটরিয়াম নির্মাণ, ৯১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন।