হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বাম হাতটি নেই তবুও একটি হাতের সাহায্যে অনেক কষ্টে পড়াশুনা চালিয়ে গিয়ে এবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী এরশাদ হোসেন।
দিনমজুর পিতা ধারদেনা করে অনেক কষ্টে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে ভর্তি করান। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও অর্থের অভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধী অদম্য মেধাবী এরশাদ হোসেনের। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চার মাস পেরিয়ে গেলেও অর্থে অভাবে বই কিনতে পারেনি সে।
এ বছর মানবিক বিভাগ থেকে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সি ইউনিটে প্রথম শীপ পরীক্ষা দিয়ে প্রতিবন্ধী গোটায় ২য় তম হয়ে উর্ত্তিন হন। এরশাদ শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ২০৮ নম্বর রুমে থাকেন ।
সে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চর নিজ গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর ইয়াদ আলী ও মা ফিরোজা খাতুনের ছেলে। এক বোন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়।
সে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী দ্বি-মুখি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৭৮ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৯২ পেয়ে উর্ত্তিন হয়েছেন। তার পরিবারে অভাব অনটন ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মাঝে এমন সাফল্যে সকলেই অভিভূত।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চর নিজ গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর ইয়াদ আলী। শিশুকালে তিস্তা নদীর পাড়ে খেলতে গিয়ে বাম হাত ভেঙ্গে ফেলেন এরশাদ হোসেন। অনেক চিকিৎসা করেও হাতটি ভাল হয়নি তার। এক সময় হাতটিতে পছন ধরে যায়। পরে তার পরিবার সবার কাে সাহায্য নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে হাতটি কেটে নেন। দরিদ্র বাবা-মা চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত বাম হাতটি হারাতে হয় এরশাদকে।
দিনমজুরী করে সংসার চালান ইয়াদ আলী। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। বাড়ি ভিটে ৫ শতক জমি ছাড়া কিছুই নেই তাদের। ছেলের পড়াশুনায় আগ্রহ থাকায় অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে পড়াশুনা করিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি করান। কিন্তু ছেলের পড়াশুনা খরচ চালাতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন ইয়াদ আলী।
এরশাদ হোসেন জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চেয়েও সংসারের অভাব-অনাটনই পড়ালেখায় সবচেয়ে বেশি বাঁধা হয়ে দাড়াঁয়। কেউ আমার পড়াশুনার খরচ বহন করলে হয়তো আমার স্বপ্নটা পূরণ হত। ভবিষ্যতে আমি বিসিএস ক্যাডার হতে চাই।
বাবা ইয়াদ আলী বলেন, সাত সদস্যের অভাব-অনাটনের সংসারে চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছেলের সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যেতে বসেছে। তাই সবার কাছে ছেলের পড়াশুনা জন্য অর্থ সাহায্যের অনুরোধ করছি।
গড্ডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আতাউর রহমান বলেন, শারীরিক আর সাংসারিক প্রতিবন্ধকার সাথে যুদ্ধ করেই সে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। সমাজের বিত্তবানরা তার পাশে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে তার স্বপ্নটা পূরণ হবে।