নিউইয়র্কে প্রবাসীদের দেয়া সংবর্ধনা সমাবেশে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, ‘নানাবিধ কারণে এশিয়াকে বাদ দিয়ে বিশ্বের অগ্রগতি সম্ভব নয়। একইভাবে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে কিংবা অবজ্ঞা করেও এশিয়ার উন্নতি সম্ভব নয়। এটাই আজকের বাস্তবতা এবং বিশ্ব মোড়লেরা সে ধরনের দৃষ্টি ভঙ্গি পোষণ করছেন। আর এই সুযোগটিই আমাদেরকে নিতে হচ্ছে।
আমরা চলমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনেও মনোনিবেশ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ধ্যান-ধারণা তারই বহি:প্রকাশ’।
রোহিঙ্গাদের সসম্মানে নিজ বসতভিটায় ফিরে যাবার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসনসহ আন্তর্জাতিক মহলকে আন্তরিক অর্থে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রবাসীরা জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
‘একইভাবে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রার সাথে আমেরিকানদের আরো বেশী পরিচিত করার ক্ষেত্রেও প্রবাসীদের গুরুত্ব অপরিসীম। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ার জন্যে প্রবাসীরা স্বতস্ফুর্ত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এখন সময় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরা বাংলাদেশের এগিয়ে চলাকে ত্বরান্বিত করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার থাকার’-উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের আমন্ত্রণে ৩ দিনের সফরে ৭ এপ্রিল নিউইয়র্কে অবতরণের পর প্রবাসীদের পক্ষ থেকে ড. এ কে এ মোমেনকে বিপুল সংবর্ধনা দেয়া হয়। জেএফকে এয়ারপোর্টেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসীর সমাগম ঘটে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩৭ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের পর ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আহবানে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে ফিরেছেন ড. মোমেন। এরপর গত নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে জয়ী হবার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন। এককালের প্রবাসী মন্ত্রী হিসেবে এই প্রথম নিউইয়র্কে আসায় সকলেই তাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানান।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার উদ্যোগে সংবর্ধনা প্রদানের সমাবেশ হয় জ্যাকসন হাইটসে বেলোজিনো পার্টি হলে। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের প্রবাসীর বিপুল সমাগমে এই সংবর্ধনা সমাবেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-কর্ম সম্পর্কে সকলেরই পড়াশোনা করা দরকার। ইতিমধ্যেই ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম এই বাঙালির জীবন-ইতিহাস সম্বলিত বেশ কটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো পড়লে সকলেই সত্যিকারের ইতিহাসের সন্ধান পাবেন। একই সাথে প্রবাস প্রজন্মকেও বাঙালির এই মহানায়কের জীবন-কর্ম অবহিত করা উচিত। ’
‘সামনের বছর জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে এই প্রবাসেও কর্মসূচি নিতে হবে। আয়োজন করতে হবে কনসার্ট, টাউন হল মিটিং, চিত্র প্রদর্শনী, র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। দূতাবাস, মিশন, কন্স্যুলেট এসব কর্মসূচির সমন্বয় ঘটাবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেবে’-বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ তৈরী হয়েছে। তাই প্রবাসীদের আরো বেশী বিনিয়োগ করতে হবে। এজন্যে সুযোগ-সুবিধারও সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছে’-বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
নিউইয়র্কে নিজস্ব ভবনে ‘বাংলাদেশ কন্স্যুলেট’ অফিস স্থাপন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু নিউইয়র্কে নয়, ৭৮টি দেশেই দূতাবাস/মিশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে নিজস্ব ভবনে মিশন এবং স্থায়ী প্রতিনিধির বাসভবন ক্রয় করেছি। এরপর প্রতি বছর বাংলাদেশের ৪৫ হাজার ডলার করে সাশ্রয় হচ্ছে।
‘৩০ ডিসেম্বরকে প্রবাসী দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রবাসীদেরকে আরো বেশী দেশমুখী করতে বর্তমান সরকার অঙ্গিকারাবদ্ধ। তাদের অভিজ্ঞতাকেও সরকার কাজে লাগাতে চায়। তাই নিজ নিজ এলাকার দূতাবাস/মিশন/কন্স্যুলেটের সাথে বিনিয়োগে আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন-বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে মন্ত্রী বানিয়ে প্রকারান্তরে প্রবাসীদেরকেই সম্মানিত করেছেন’-উল্লেখ করেন ড. মোমেন।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. খন্দকার মনসুর এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া। সাংবাদিক-মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এবং চট্টগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক আস্রাব আলী খান লিটনের সঞ্চালনায় শুরুতেই ‘প্রবাসের অহংকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন’কে ক্রেস্ট প্রদান করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন। ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, সহ-সভাপতি আবুল বাশার চুন্নু এবং ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও সেক্রেটারি ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন বিপুল করতালির মধ্যে। এরপরই ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন কর্মসূচির সূচনা ঘটায় ফোবানার নেতৃবৃন্দ। নির্বাহী সচিব জাকারিয়া চৌধুরী, ৩৩তম ফোবানার হোস্ট কমিটির আহবায়ক নার্গিস আহমেদ ও সদস্য-সচিব আবির আলমগীর ছিলেন এ সময়। নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মকর্তারাও মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়াও ডজন দেড়েক সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
এর আগে আমেরিকা-বাংলাদেশ বিজনেস এলায়েন্স’র পক্ষ থেকেও মন্ত্রীকে বিপুলভাবে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ব্যানারেও দুটি সংবর্ধনা-সমাবেশ হয়েছে ৭ এপ্রিল। অথাৎ বহুদিনের প্রবাসী ড. মোমেনের নতুন পরিচয়ে নিউইয়র্কে অবতরণের পরই গোটা কমিউনিটিতে ভিন্ন এক আমেজ তৈরী হয়।
৮ ও ৯ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং কংগ্রেসের নীতি-নির্ধারকদের সাথে বৈঠকে মিলিত হবার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র এসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নিউইয়র্কের সকল কর্মসূচিতেই মন্ত্রীর সাথে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।