রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলার রায় আগামী ১৫ এপ্রিল ঘোষণা করা হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক অনুপ কুমার।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলায় মোট ৩৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। কারণ, এ ঘটনার সঙ্গে সবার সম্পৃক্ততা প্রমাণ করা গেছে।
তিনি আশা করছেন, আসামিদের সবার সাজা হবে।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে আসামিরা যে জড়িত তা প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে রায়ে আসামিরা বেকসুর খালাস পাবেন। আসামিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট একরামুল হক, মিজানুল ইসলাম, আবু বাক্কার, রইসুল ইসলাম, আব্দুল মালেক রানা প্রমুখ।
লালন ভক্ত ড. শফিউল ইসলাম মুক্তমনা ও প্রগতিশীল আদর্শের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন। ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মুহাম্মদ এন্তাজুল হক অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ড. শফিউল খুনের ৫ ঘণ্টার মাথায় ফেসবুকে একটি পাতা খুলে দায় স্বীকার করে ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন। তাই উগ্রবাদী এই সংগঠনটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে ব্যক্তিগত কোন্দলের জেরেই খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। আর এই কোন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ২৩ নভেম্বর প্রথমেই রেশমার স্বামী রাবি ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুস সামাদ পিন্টুসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে রেশমাকেও গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে রেশমা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। পরবর্তীতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তৎকালীন পরিদর্শক রেজাউস সাদিক ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
নাসরিন আখতার রেশমা ও তার স্বামী আবদুস সামাদ পিন্টু ছাড়াও অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জল, পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর যুবদলের নেতা আরিফুল ইসলাম মানিক, সিরাজুল ইসলাম, সবুজ শেখ, আল-মামুন, আরিফ হোসেন, সাগর হোসেন, জিন্নাত আলী এবং ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবু। তারা সবাই এখন জামিনে।