বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে সম্পাদিত সীমান্ত চুক্তি ভারতের সংসদে অনুসমর্থনের জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। একই সঙ্গে দু‘দেশে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে শুল্ক ও শুল্ক বহির্ভূত বিভিন্ন বাধা দূর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার দি বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিসিআই) আয়োজিত দশ দিনব্যাপী ১৩তম ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার-২০১৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বিসিসিআই সভাপতি অলোক রায়ের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি শাজাহান খান, বিজিএমইএ সভাপতি আতিক ইসলাম, বিসিসিআইয়ের মহাপরিচালক পি রায় এবং মেলা পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এস ডি গুপ্তা উপস্থিত ছিলেন।
এবারের মেলায় বাংলাদেশসহ ১০টি দেশ অংশ নিচ্ছে। মেলায় বাংলাদেশের ৯৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হস্তশিল্পের পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য, পাটজাত পণ্য, এগ্রো ফুড ও জামদানী স্থান পেয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের ৮২টি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ নিয়েছিল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারত সরকার বাংলাদেশকে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। অস্ত্র এবং তামাক ছাড়া বাংলাদেশের সব পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যেও রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশে তৈরি পণ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত ভারতেও জনপ্রিয়। বাণিজ্য বাড়াতে হলে অবশ্যই দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে চায়না, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমারের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি অর্থনৈতিক করিডর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক করিডরটি চালু হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটবে।
ভারতীয় টিভি চ্যানেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বাংলাদেশের মানুষ দেখার সুযোগ পেলেও, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো ভারতের মানুষ দেখার সুযোগ পান না। এ বিষয়ে ভারত সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশে ১৬ কোটি ভোক্তা রয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত সহজলভ্য ও দক্ষ জনশক্তি রয়েছে। বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। সবমিলিয়ে এখন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঘনিষ্ট যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। এতে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে সহায়ক হবে এবং যৌথ বিনিয়োগের পথ সুগম হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে বর্ডার হাট স্থাপন করা হয়েছে। দু‘দেশের বাণিজ্যে বাধাগুলো দূর করতে সরকারি ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ভিসা সহজিকরণ, উভয় দেশের আমদানি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, ভোক্তাদের উদ্বুদ্ধকরণ, উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসায়ীদের মতবিনিময়য়ের সুযোগ সৃষ্টি জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের অনেক পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। এগুলো সহজে সেখানে যেতে পারলে ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়বে।