রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে দাউদাউ করা ভয়ঙ্কর আগুনে পুড়েছে বহুতল ভবন এফআর টাওয়ার। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে লাগা টানা ছয় ঘণ্টার দানবরূপী আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এফআর টাওয়ারে আটকা পড়া মানুষের উদ্বেগ-আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে সেখানকার পরিবেশ। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর কারণে আকাশ দেখা যাচ্ছিল না।
এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে থাকেন তারা। কিন্তু পানি দেওয়ার সেই পাইপ ফুটো থাকায় কাজে ব্যঘাত ঘটে।
বিষয়টি চোখে পড়ায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহযোগিতা করতে পলিথিন দিয়ে সেই ফুটো বন্ধ করার চেষ্টা করে নাঈম নামে এক শিশু। তবুও ফুটো দিয়ে পানি বের হতে থাকলে পাইপের সেই পলিথিন জড়ানো স্থানে হাত ও পা দিয়ে শক্ত করে ধরে থাকে সে, যাতে এখান দিয়ে কোনো পানি না বের হয়।
আগুনে আটকা পড়া অসহায় ব্যক্তিদের জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করা শিশু নাঈমের ঢাকার কড়াইল বউবাজারে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। তার বাবা ঢাকায় ডাব বিক্রি করে, মা অন্যের বাসায় কাজ করে।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান নাঈম ক্লাশ ফাইভে পড়াশোনা করছে। আগুন লাগার সময় সেও অন্যদের মতো কৌতুহলি হয়ে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে আসে। যখন দেখে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহায়তা প্রয়োজন তখন পাইপ চেপে ধরে সহযোগিতা করে।
পাইপ চেপে ধরা ছবিটি কখন তোলা হয়েছে সে নিজেও জানে না। তবে এক অসহায় মুহূর্তে ছোট শিশুর এই সহায়তার মানসিকতা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ময় তৈরি করেছে। এই কাজের জন্য সবাই শিশুটিকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন।
নাঈম সাংবাদিকদের বলেছে, আমি যখন আগুন লাগছে দেখলাম, তখন একাই চইলা আসছি। ২০ মিনিটের মতো চেষ্টা করছি। পরে আমার বাপে আমারে নিয়া যায়। রাইতে আমার ছবি ইন্টারনেটে দ্যাখছে আমার বাড়িওয়ালা, সেই আমার বাবা-মায়রে দেখাইছে।
মানবিক এই শিশু নাঈম বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চায় জানিয়ে সাংবাদিকদের জানায়, আমি পড়ালেখা করতে চাই। অনেক পড়াশোনা কইউরা আমি বড় পুলিশ অফিসার হইতে চাই।