ঢাবির ৩৫ শিক্ষককে বিদায়ী সংবর্ধনা

শিক্ষা
Dhaka_University_logo_banglanews24_288860385ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হয়ে প্রবেশ করেছিলেন তারা।মেধার শীর্ষে আরোহন করে হয়েছিলেন শিক্ষক। দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে তারা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে তৈরি করেছেন জ্ঞানের এক একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে। নিজের মেধা, শ্রম ও গবেষণা দিয়ে ঋদ্ধ করেছেন জাতিকে। আজ যে বিদায়ের পালা।

‘ছাত্রজীবন ও শিক্ষকতা মিলিয়ে ৪০ বছর সম্পৃক্ত ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এখান থেকে অবসরের মাধ্যমে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় থেকে বিদায় নিচ্ছি।’

এভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নিজের আত্মার বন্ধনের কথা তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোকসেদ আলী হাওলাদার।

শুক্রবার ঢাবির টিএসসি মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত ৩৫জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমন আবেগ ঝরে এই শিক্ষকের বক্তব্যে।

দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের শিক্ষা ও গবেষণায় এই জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অকুণ্ঠ অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে ছিল এমন আয়োজন। অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষকদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তাদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান নবীন শিক্ষকেরা।

বিদায়বেলায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাদের কথায় উঠে আসে দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের সুখ দুঃখের নানা স্মৃতি।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অধ্যাপক মোকসেদ আলী হাওলাদার আরও বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শিখেছি।বিদায়ের ক্ষণে মনে বেজে উঠছে কখন এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে? কারণ সবারই তো পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়।’

সংবর্ধনার জবাবে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কখনো মনে হয়নি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যেতে হবে।শিক্ষক সমিতি কর্তৃক এই অনুষ্ঠানের চিঠি পেয়ে মনে জাগ্রত হলো, আমারও অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে।সমুখে বিদায়ের ক্ষণ।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মধুর স্মৃতি হয়ে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনা।আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। যারা থাকবেন এবং তরুণ শিক্ষকেরা আমাদের সেই কাজকে অগ্রগামী করে আরো সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে গেলে বেশি আনন্দিত হবো।

সমিতির পক্ষ থেকে পাঠ করা মানপত্রে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধির পথে অগ্রজদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।

আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম বলেন, ‘যে স্বপ্ন নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম- তার অনেকগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, অনেকগুলো হয়নি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে কী পেয়েছি সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা বিশ্ববিদ্যালয়কে কী দিতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি সেটার মূল্যায়ন আপনাদের, কতটুকু প্রচেষ্টা ছিল তা আমি জানি। সবার সব চেষ্টা সফল হয় না। সেভাবে আমারও কিছু চেষ্টা সফল হয়েছে, কিছু হয়েছে ব্যর্থ।’

উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ কর্মজীবনে আপনারা শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গবেষণায় অসামান্য অবদান রেখেছেন, তা আজীবন বলবৎ থাকবে। তিনি বলেন, অধ্যাপকরা কখনো অবসর নেন না। তারা চাকরি জীবন থেকে অবসর নিলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে চির জাগরুক থাকেন।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের মাঝে বহুমত এবং চিন্তা-চেতনার পার্থক্য রয়েছে। তবুও সব সংকটময় মুহূর্তে আমরা একত্রিত হয়েছি এবং সেই সংকট মোকাবেলা করেছি।’

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন। – See more at: http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/350298.html#sthash.562sFtrq.dpuf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *