হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের অবহেলিত বিলুপ্ত ছিটমহল ১১৯ নং বাঁশকাটা দয়ালটারী গ্রামের শিশুদের বিনা পয়সায় পাঠদান করাচ্ছেন তিন সন্তানের জননী রিনা আক্তার।
শিশুদের পাঠদানও গ্রামে বাল্য বিয়ের খবর পেলে ঝাপিয়ে পড়ে প্রতিরোধ করেন। এ সব কাজ করে দীর্ঘ দিনের অবহেলিত বিলুপ্ত ছিটমহলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন রিনা আক্তার।
তিনি পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহলের ১১৯ নং বাঁশকাটা দয়ালটারী গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের স্ত্রী রিনা আক্তার।
এসএসসি পাশ করার পর তার বাবা মা তাকে বাল্য বিয়ে দেন। স্বামীর সংসারের পাশা পাশি পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন রিনা।
স্বামীর ঘরে এসেই এইচএসসি ও পাটগ্রাম সরকারী জসীম উদ্দিন কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
ওই এলাকায় ৬ বছর ধরে শিশুদের বিনা পয়সায় শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করান। তার এমন প্রতিভায় গ্রামের সবাই খুশি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,বাড়ির আঙ্গিনায় গ্রামের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন রিনা আক্তার। পাশা পাশি শিশুদের হাতের লেখাও শিখাচ্ছেন তিনি।
এক শিার্থীরা বলেন, স্কুল শেষে আপার কাছে প্রতিদিন পড়তে আসি খুবই ভাল লাগে। রিনা আক্তার বলেন, দরিদ্র ঘরে মেয়ে আমি এসএসসি পাশের পর বাবা-মা গরিব থাকায় আমাকে বাল্য বিয়ে দেন।
বিয়ের পর সংসারে কাজ গুছিয়ে বেকার বসে না থেকে গ্রামের শিশুদের পড়াতে শুরু করি। এক সময় দিনে দিনে শিার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বর্তমানে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ৩০ জন শিার্থী পড়াশোনা করতে আসে। তাদের আমি বিনা পয়সায় পড়াই। সাংসারের পাশা পাশি আমার পড়াশুনাও চলছে।
এ দিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করছি। রিনা আক্তার আরও বলেন, আমার বাল্য বিয়ে হয়েছে তাই আমার মত আর কারো যেন বাল্য বিয়ে না হয়। গ্রামে বাল্য বিয়ের খবর পেলে তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করাই। কিন্তু দারিদ্রতার কারনে অনেক সময় সফল হতে পারি না।
দারিদ্রতার মাঝেও সমাজে কিছু এটা দিতে পারে আমি খুশি।
রিনা আক্তারের স্বামী নজরুল জানান, আমার স্ত্রীর পড়াশুনা আগ্রহ দেখে আমি তার পড়াশুনার জন্য সহযোগিতা করছি। সে এলাকার শিশুদের বিনা পয়সায় পড়ান এটা দেখে আমারও ভাললাগে।
এ বিষয়ের জোংড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, পাটগ্রাম উপজেলার সবচেয়ে বড় ছিটমহল ছিল ১১৯ নং বাঁসকাটা। দীর্ঘ দিন অবহেলিত ছিল এ গ্রামটি।
এ এলাকার শিশুদের বিনাপসায় পড়ান রিনা আক্তার। তার এই ভাল কাজে সবাই প্রসংশা করছেন।