পদ্মা সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নস্বর পিলারে একটি স্প্যান বসানোর কথা ছিল। বৃহস্পতিবারভোর থেকে স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু করেন সেতু বিভাগ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা। কিন্তু স্প্যান ওঠানোর ক্রেনে যান্ত্রীক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বেলা ১২টার দিকে স্প্যান না ওঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বুধবার ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে মুন্সিগঞ্জের কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তের নাওডেবায় আনা হয়।
এর আগে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৮টি ও মাওয়া প্রান্ত একটি স্প্যান বসানো হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষর সহকারি প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বলেন,ক্রেনের কিছু ত্রুটির কারনে বৃহস্পতিবার স্প্যান বসানো হচ্ছে না। শুক্রবার সকালে স্প্যানটি পিলারো বসানো হবে।
ওই স্প্যানটি বসানো হলে জাজিরা প্রান্তে ১২০০ মিটার এক সাথে দৃশ্যমান হবে জাজিরা প্রান্তে।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল পদ্মা সেতুর ৭৩শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আটটি স্প্যান এরই মধ্যে বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ৪২টি পিলারের মধ্যে ২২টির পাইল পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে আরও ১০টি পিলার নির্মাণ সম্পন্ন হবে। সব মিলিয়ে দুই মাসের মধ্যে ৩২টি পিলারের নির্মাণ শেষ হবে। এ ছাড়া ২৬২টি পাইলের মধ্যে ২১০টি পাইল নদীগর্ভে বসানো হয়ে গেছে।
সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর পদ্মা সেতুর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়। ওই স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে এই প্রান্তে পদ্মা সেতুর টানা ১ হাজার ৫০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়েছিল। এ ছাড়া মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে দেড় শ মিটারের আরও একটি স্প্যান আগেই বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর ১ হাজার ২০০ মিটার এখন দৃশ্যমান।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ স্প্যান বসে। আর গত বছরের শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর স্তম্ভের ওপর একমাত্র স্প্যানটি বসানো হয়।
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।