সবুজ পাহাড় এখনো রক্তবর্ণ। বাতাসে ভাসছে রক্তের গন্ধ। কাটেনি আতঙ্ক। অদৃশ্য শঙ্কায় রয়েছে পাহাড়বাসী।
তাই পাহাড়ি সড়কে চলাচল করছে কোন যানবাহন। সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ও আহতদের স্বজনের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ। অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে পাহাড়িগ্রামের মানুষগুলোর জনজীবন।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, স্থানীয় সস্ত্রাসী হামলার ভয়ে ঘর ছাড়তে নারাজ সাধারণ বাঙালীরা। তবে এসব অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্থর। তাই গহীন জঙ্গলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অবৈধ আস্তানায় অভিযান চলাচ্ছে যৌথবাহিনীর দল। এখনো ধরা পরেনি কেউ। তাই অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একে এম মামুনুর রশিদ বলছেন, পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল জোরদাড় করা হয়েছে। পুলিশও আছে কঠোর অবস্থানে। আর একটি নাশকতাও মেনে নেওয়া হবেনা। এছাড়া ঘটনার দিন আহতরা এখনো চিকিৎসাধিন রয়েছে। তবে এখনো তাদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। চিকিৎসা চলছে।
অন্যদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে হত্যার দুইদিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত থানায় কোন মামরা হয়নি বলে জানান বিলাইছড়ি থানার কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেস আলী। তিনি বলেন, নিহতদের স্বজনরা এখনো কোন মামলা কিংবা অভিযোগ করতে থানায় আসেনি। তাই মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের ডাকা ৪৮ ঘন্টার অবরোধও শেষ হয়েছে। তবে পরিস্থিতি থমথমে। এলাকায় পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খালা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা জোরদাড় করেছে। আরও কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
তদন্ত কমিঠির ঘটনাস্থল পরিদর্শন-
গত সোমবার (১৮মার্চ) উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটের দিন রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় হতাহতের ঘটনার তদন্ত কমিঠির ৭ সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা হলেন তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিসের ডিডিএলজি (অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্তীর, পার্বত্য চট্টগ্রাাম উন্নয়ন বোর্ড সদস্য (প্রশাসন), আশীষ কুমার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, মেজর আশরাফ, উপ-অধিনায়ক বিজিবি বাঘাইহাট জোন,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সাদেক আহমেদ, চট্টগ্রাম ৩০ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক ও অধিনায়ক মো. নুরুল আমিন, কমিটির সদস্য সচিব রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম।
এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন, গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর তিন পার্বত্য জেলার প্রধান কমান্ডার মো. আমীন, রাঙামাটি বাঘাইহাট ৫৪ বডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) সিও লে. কর্ণেল মো. আশরাফ ও রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাদিম সোরোয়ার প্রমুখ। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলা গিয়ে পৌছায় তারা। এরপর শুরু করে অনুসন্ধান। প্রত্যক্ষদশী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ঘটনার বিবরণ নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি বাঘাইছড়ি থানার কর্মকর্তা (ওসি) এম এ মঞ্জুর আলম জানান, কমিটির সদস্যরা বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধিন গুলিবিদ্ধ পোলিং কর্মকর্তা রত্ম চাকমা (৩০), মো. হুমায়ন রশিদ (২৫) এ্যানথোনি খৃষা (২৭) ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনী আনসার ভিটিপির সদস্য রওশনারা (৫০), শারমীর আক্তার (১৮) কোহিনুর আক্তার (৩৫) সাথে কথা বলেন তদন্ত কমিটির প্রধানসহ অন্যান্য সদস্যরা।
এছাড়া ভাঘাইছড়ি নয়মাইল এলাকায় হতাহতের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে হামরার শিকার গাড়িগুলো থেকে বিভিন্ন আলামাত সংগ্রহ করেন। এছাড়া নিহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলে ক্ষতিপূর্ণসহ খুনিদের দৃষ্টান্তমূল শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাসও দেন। এছাড়া যতদিন পর্যন্ত আহতরা পুরোপুরি সুস্থ্য না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যবস্তা চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের নিদের্শ দেন।
স্থানীয়দের মানববন্ধন-
এদিকে, রাঙামাটিতে পর পর দুটি খুনের ঘটনায় এখনো উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ ও খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় করছে বিক্ষোভ-মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন। বৃহস্পতিবারও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চত্বরে মানববন্ধন করেছে শত শত নারী পুরুষ।
উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন। এসময় মানববন্ধনের বক্তব্য রাখেন বাঘাইছড়ি উপজেলার পৌর মেয়র মো. জাফর আলী খান, উপজেলা পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনছুর আহমেদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদ মো. আলী হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দীন, বাঘাইছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য মো. আজিজুর রহমান।
মানববন্ধনে বাঘাইছড়ি উপজেলার পৌর মেয়র মো. জাফর আলী খান বলেন, শান্ত পাহাড়, অশান্ত করে রেখেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তাদের গুলিতে একের পর এক প্রাণ হারাছে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষ। এর একটারও বিচার হচ্ছেনা। তাদের অবৈধ অস্ত্রের এতোটা ধাপট যে পাহাড়ের সব মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ২৭জন মানুষকে ক্ষতবিক্ষত করেছে তা কখনো মেনে নেওয়ার মত না। এ বিচার করার জন্য পাহাড়ে পাহাড়ে চিরনি অভিযান চালাতে হবে সেনাবাহিনীকে। তবেই তাদের দৌরত্ব করে যাবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (১৮মার্চ) রাতে উপজেলা নির্বাচনের শেষে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কংলাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি কেন্দ্রের মালামালসহ উপজেলা সদরে আসার পথে নয় মাইল এলাকায় ভোটগ্রহন কর্মকর্তা ও পুলিশ, আনসার ভিডিপি সদস্যদের উপর ব্রাশ ফায়ার করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সেসময় ঘটনাস্থলে মারা যায় ৭জন। আহত হয় আর ১৯জন। এ ঘটনার ১৩ঘন্টা পর অর্থাৎ মঙ্গলবার (১৯মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিকে গুলি করে হত্যা করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনায় পাহাড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।