রাতুল মন্ডল শ্রীপুর: গত কয়েকদিন ধরেই শীতলক্ষ্যায় ভেসে উঠছে বিভিন্ন জাতের মাছ,স্থানীয় জেলেদের মধ্যে এতে সাময়িক আনন্দ হলেও ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে তারা। তাদের কথা, শীতলক্ষ্যার জলীয় পরিবেশ হঠাৎ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ায় মাছ আর বিষাক্ত পানিতে থাকতে পারছে না। যে হারে গত কয়েকদিন ধরে মাছ ধরা পরেছে তাতে আগামী কয়েকমাস মৎস্য শূণ্য হওয়ার আশংকা রয়েছে শীতলক্ষ্যার একটি অংশে।
দেশের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে সচ্ছ জলের কারনে শীতলক্ষ্যার পরিচিতি সবার আগে। পুরাতন ব্রক্ষপুত্র হতে এই নদীটির উৎপত্তি গাজীপুর জেলার টোক নামক স্থান থেকে। পরে জেলার বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঢাকা নারায়নগঞ্জ, নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবাহিত হয়েছে। সর্পিলাকার এই নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৮ কিলোমিটার।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন কারখানার শিল্প বর্জ্য সুতিয়া নদীর মাধ্যমে শ্রীপুরে প্রবেশ করেছে কাওরাইদ ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরপুর এলাকায়। পরে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলার ত্রিমোহনী এলাকায় গিয়ে শিল্প বর্জ্য প্রবেশ করেছে শীতলক্ষ্যায়। আর এতেই নদীটির পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। বিপর্যয়ে পরেছে নদীটির জলজ পরিবেশ।
বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার জানান, শান্ত নদী হিসেবে শীতলক্ষ্যার পরিচিতি গাজীপুর জুড়েই। নদীটিকে কেন্দ্র করেই শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে শীতলক্ষ্যায় দেশীয় মাছের ছিল অবাধ ভান্ডার। বর্ষার পর একদিকে নদীটির পানি কমে যাওয়া অন্যদিকে উজান হতে শিল্প বর্জ্য নদীটিতে প্রবেশ করায় গত কয়েকদিন ধরে নদীটির শ্রীপুরের বরমী ও বরামা এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে। বর্তমানে এভাবে জলজ প্রাণী মাছ শুণ্য হয়ে গেলে অপূরণীয় একটি ক্ষতি হয়ে যাবে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নদীটিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন সুরেশ সাহা তার ভাষ্য,শীতলক্ষ্যায় ছিল চিংড়ি,বাউশ,বাইম,রিঠা মাছের অবাধ ভান্ডার। এছাড়াও নদীটিতে পাওয়া যেত প্রচুর বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির মাছও। আমরা শীতলক্ষ্যার মাছ ধরেই সংসার চালাতাম কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ ভেসে উঠছে। শত শত লোক প্রতিদিনই মাছ ধরছে। কিন্তু আমাদের ভয়ের কারন হচ্ছে এভাবে মাছ শূণ্য হয়ে পড়লে ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াবে।
অপর জেলে অমল সাহা জানান,শান্ত এই নদীটি গত মাস পর্যন্তও ভাল ছিল। হঠাৎ ক্যামিকেল যুক্ত পানি প্রবেশ করায় জলজ প্রানীগুলো অশান্ত হয়ে উঠছে।বিশেষ করে মাছ ভেসে উঠার পাশাপাশি লাফিয়ে ডাঙ্গায় উঠারও খবর পাওয়া গেছে।
বরমীর কুড়িয়াদী গ্রামের ইব্রাহীম খলিল জানান,শীতলক্ষ্যা নদীটি আমাদের গাজীপুরের ঐতিহ্য। নদীটির গাজীপুর অংশ তেমন দখলের কবলে না পরলেও দূষণে এখন অস্তিত্ব সংকটে পরেছে। নদীর পানি কালো রঙ ধারনের পাশাপাশি তীব্র দূর্গন্ধও হচ্ছে।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি মনির হোসেনের ভাষ্য,উজান হতে নেমে আসা দূষিত পানিতে শীতলক্ষ্যার পানি দূষণের কারনে জলজ প্রাণী হুমকীতে পড়ায় নদীটিতে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি টিকিয়ে নদীটিকে রক্ষায় দূষণ ঠেকানোর জন্য প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
শ্রীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদিউজ্জামান জানান,শিল্প বর্র্জ্যরে সাথে নানা ধরনের ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি নদীতে প্রবেশ করায় এর পানি বিষাক্ত হয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যেভাবে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে তাতে এই পরিবেশে জলজপ্রাণী বসবাস হওয়া অসম্ভব হয়ে দাড়াবে। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম জানান,উজান থেকে নেমে আসা শিল্প বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা দূষণের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। নদী দূষণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।