তবে কি বাংলাদেশের ফাঁসিও চাই

Slider অর্থ ও বাণিজ্য গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ নারী ও শিশু বাংলার আদালত রাজনীতি শিক্ষা সম্পাদকীয় সারাদেশ সারাবিশ্ব

flageশাপলা

— চারিদিকে ফাঁসি ফাঁসি আর ফাঁসি চাওয়ার উৎসব। দেশের মাটিতে ফাঁসি চাইতে চাইতে বিদেশে গিয়েও এখন ফাঁসি চাওয়া শুরু করেছি। তবে তা এখন আর একবার নয়, একজনের ৫৭বার। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশী নাগরিকের ফাঁসি চাওয়া প্রমান করে বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা দূর্বল। বিদেশে গিয়ে দেশের দুর্নাম করা নাগরিক হিসেবে নিজেকে ছোট মনে করার সামিল। আবার যদি মনে করি অপারগ হয়ে ওই কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছি তবে বিদেশে দেশের বিচার নিশ্চিতে ফাঁসির দাবি আন্দোলন বলে মনে করতে হবে যা সুখকর নয়।

বেশ কিছু দিন যাবৎ বাংলাদেশে ফাঁসির শ্লোগান দিয়ে মিছিল সমাবেশ বেশ জোড়ালো আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। একটি ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিন শত লোকের অটো ফাঁসি হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চেয়ে শাহাবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে ফাঁসি চাওয়ার আন্দোলন বাংলাদেশে চাঙ্গা আন্দোলন হিসেবে পরিনত হয়েছে। ওই আন্দোলনের অনুকরণ করে বিভিন্ন ঘটনায় আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের ভাই-বোনেরা নেচে গেয়ে ফাঁসির দাবি করে আন্দোলন করছেন। ফলে আন্দোলন হলেই ফাঁসির শ্লোগান আমাদের একটি ভিন্ন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জিয়াউর রহমান হত্যা মামলায় তার স্ত্রী খালেদা জিয়া জড়িত মর্মে ইঙ্গিত পরোক্ষাভাবে অভিযোগ করেছেন। সুতরাং হত্যা মামলায় অভিয়ুক্ত হলে খালেদা জিয়ার ফাঁসি হতে পারে। আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ঘটনায় তার মেয়ে শেখ হাসিনা জড়িত মর্মে অভিযোগ করেছে বিরোধী দল বিএনপি। সুতরাং হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হলে তারও ফাঁসি হতে পারে।

চলমান টক অব দ্য কান্ট্রি হলো, সিঙ্গাপুরে জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান বাংলাদেশে ৫৭ বিডিআর সদস্য হত্যায় অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫৭ বার ফাঁসি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তৎকালিন মন্ত্রীদের ফাঁসির রায় হওয়ায় সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বর্তমান দায়িত্বশীল মন্ত্রীদেরও ফাঁসি দাবি করেছেন তারেক রহমান।

২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা মামলা ও ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট সিরিজ বোমা হামলা মামলায় ক্ষমতাসীন সরকারের দায়িত্বীল ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। ওই সকল মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি।

সুতরাং সরকারী দল আর বিরোধী দলের দাবি অনুসারে যদি ফাঁসি হয় তবে ফাঁসির বাইরে থাকা লোকের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে আসামির তালিকা বড় হবে কারণ ১৯৭১ সালে যারা যুদ্ধ করার বয়স থাকলেও যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেননি তাদেরও ফাঁসির দাবি উঠতে পারে। এসকল ফাঁসি কার্যকর হলে বাংলাদেশও ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যাবে। এতে দেশে রাজনৈতিক সংকট পড়বে বলে ধারণা অমূলক নয়। কারণ বাংলাদেশ মূলত রাজনৈতিকভাবে দুটি শিবিরে বিভিক্ত।

পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, খালেদা জিয়া সাত বছর পর পরিবার পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন। শনিবার তাদের পারিবারিক মিলন হতে পারে বলে গনমাধ্যমে সংবাদ আসছে। সরকার বলছে, খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে ষড়যন্ত্র করতে যাচ্ছেন। এতে বুঝাই যাচ্ছে, খালেদা জিয়া স্বপরিবারে মিলিত হতে পারছেন না বা যাচ্ছেন না। ফলে দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে বেগম জিয়ার  পারিবারিক মিলন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন, আমাদের দেশের পারিবারিক মিলন মেলা বিদেশের মাটিতে হবে কেন! বাংলাদেশী একটি পরিবারের সদস্যদের  যদি বিদেশে গিয়ে দেখা করতে হয় তবে আমরা নিরাপদ থাকলাম কি ভাবে! দেশের মাটিতে পারিবারিক মিলন মেলা করতে যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চেয়ারে থাকতে হয় তবে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি পারিবারিক মিলন মেলা অপসংস্কৃতিতে পরিণত হওয়া আশংকা থাকবে। এই সংস্কতি চালু হলে রীতি পাল্টানো  কষ্টকর হবে।

আমাদের প্রশ্ন, কোন অপরাধ সংঘটিত হলে এর দায় কে নেবে সরকার না বিরোধী দল তা স্পষ্ট করা উচিত। আর গণতন্ত্র যদি চালু রাখা দরকার মনে করা হয়, তবে পরমতের প্রতি শ্রদ্ধার জায়গায় সকলকে পৌঁছতে হবে। ক্ষমতার জন্য রাজনীতি, দেশ ও মানুষের জন্য নয় এই ধররণের অপকর্ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হয় ফাঁসির উৎসবে কে কখন কোথায় হারিয়ে যাবেন তার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে যেমনটি আমরা পেয়েছি। মনে রাখা উচিত, আমরা এখনো অনেক লাশের সন্ধান পাইনি। কবরে লাশ দাফন করে নিয়মিত ফুল দিচ্ছি আর দোয়া করছি তবু সন্দেহের অভিযোগ আছে, লাশ নিয়ে।

একজন চায়ের দোকানী বলেছেন, তারেক জিয়া শেখ হাসিনার নাম ধরে ডাকে আর জয় খালেদা জিয়ার নাম ধরে ডাকে। তারা যদি মায়ের বয়সীদের নাম ধরে ডাকতে পারেন তবে আমরা ডাকলে দোষ কি!

চায়ের দোকানীর অভিযোগ যদি সত্য মনে করেন তবে দুই শিবিরে বিভক্ত বাংলাদেশের ভবিষৎ আশা ভরসার স্থানগুলো কতটুকো নিরাপদ! দুই দলের ভবিষৎ কান্ডারীরা বর্তমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতা অনুসরণ করবেন, না করবেন না, পাঠকরা অবশ্যই ভালো জানেন। আর তা ভেবেই একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *