‘সুন্দরবনে পঞ্চাশ বছর ক্ষতিকর প্রভাব থাকবে’

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

112সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় বনের ইকোসিস্টেম ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকালে বাপা আয়োজিত ‘শ্যালা নদীতে তেল ট্যাংকার দুর্ঘটনা : বিপর্যস্ত সুন্দরবনের পরিবেশ, বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।

বাপার ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সুন্দরবনে দুর্ঘটনাস্থল সরেজমিনে ঘুরে আসার পর এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মতিন বলেন, এর প্রভাবে প্রাথমিকভাবে অমেরুদণ্ডী প্রাণী ও ছোট গাছ মারা যাবে। পরে ধীরে ধীরে বড় গাছ মারা যাওয়ার পাশাপাশি গাছ উৎপাদন কমে যাবে।

২০০২ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি গবেষণা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়লে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। এর প্রভাব অন্তত পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত থাকবে।’

এ সময় দুর্ঘটনার পর সরকারের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্ষমতা আশ্রয়ী রাজনীতিবিদদের জ্ঞানের অভাব, দাম্ভিকতা ও উন্মাসিকতা আছে। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে সুন্দরবনে তেলের ট্যাঙ্কার ডুবির পর তাদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড। আমরা বিশেষজ্ঞ নিয়ে বসে আছি, অথচ সরকার অন্যের সাহায্য নিতে চায় না।’

বাপার যু্গ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘তেলের ট্যাংকার ডুবির পর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে সুন্দরবনকে ধ্বংস করা হচ্ছে। কাদার সঙ্গে মিশে থাকা তেল বনবিভাগের কর্মীরা পা দিয়ে মাড়িয়ে মিশিয়ে দিচ্ছে। তেল লেগে আছে এমন গাছ কেটে ফেলছে। আলামত ধ্বংস করে তারা বুঝাতে চাচ্ছে কিছুই হয়নি। এই ধরনের কাজে পরিবেশ আরও ঝুঁকিতে পড়বে।’

সংবাদ সম্মেলনে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়া যায়, অথচ এই বিপর্যয়ের পর বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছি না। পাখি, মাছ ও ডলফিন মারা যাচ্ছে আর আমরা অহংকার নিয়ে বসে আছি।’

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন এক দিনে তৈরি হয়নি। ১ লাখ বছরের এই বন উন্নয়নের নামে ধ্বংস করে দিতে পারি না। অথচ সরকার মনে করছে এটি সামাজিক বনায়ন। ২/৩ বছরের মধ্যেই বনায়ন করার মাধ্যমে সুন্দরবন তৈরি করা যায়।’

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন হলে সুন্দরবন আরও ঝুঁকিতে পড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন চাই, মধ্যম আয়ের দেশ চাই। তবে সুন্দরবন ধ্বংস করে নয়। তাই অবিলম্বে এ বিষয়ে সরকারকে নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

গণতন্ত্রের পর সরকার সুন্দরবন ধ্বংস করছে বলেও জানান তিনি।

৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীর চাঁদপাই রেঞ্জে সাউদার্ন স্টার-৭ নামে একটি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যায়। এতে ওই ট্যাংকারের ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *