দেশে চার লক্ষাধিক শিশু গৃহকর্মে নিয়োজিত

নারী ও শিশু

Child_Maid_Servant-600x450দেশে চার লক্ষাধিক শিশু গৃহকর্মের মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই মেয়ে শিশু। গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের বয়সসীমা ৫-১৮ বৎসর। এ সকল গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে দৈনিক গড়ে ১৫ ঘন্টা কাজ করে থাকে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারী সংস্থা এসিস্‌ট্যান্স ফর স্লাম ডুয়েলার্স (এএসডি) আয়োজিত ‘অধিক ঝুঁকিতে থাকা শিশু: পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে এএসডি, আইএলও, ইউনিসেফ, বিল‌স ও বিএসএএফ কর্তৃক পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানানো হয়, অধিকাংশ গৃহকর্মী তিন বেলা খাবার পেলেও খাবারের পুষ্টিমান অত্যন্ত নিম্ন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তারা পচা-বাসী খাবার পেয়ে থাকে এবং সময়মতো খেতেও পারে না। গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা খুবই কম। বর্তমানে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের গড় মাসিক মজুরী ৫০৯ টাকা।

গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা প্রায়শঃই নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। গৃহকর্মে নিয়োজিত অনেক শিশু চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। কখানো কখনো গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা প্রায় বন্দী দশায় জীবন যাপন করে। তাদের পরিবারের কারও সাথেই দেখা করার কোন সুযোগ থাকে না।

অনুষ্ঠানে গৃহকর্মে শিশুরা নিয়োজিত হওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, গ্রাম ও শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মসূচির ব্যাপক ফারাক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য, পিতা-মাতার শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবকে দায়ি করা হয়।

অপদিকে দেশে পথশিশুদের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য সাম্প্রতিক কালে কোন জরীপ করা না হলেও তথাপি এ ধরণের শিশুদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ২০০৫ সনে পরিচালিত এক জরীপ অনুসারে ৬টি বিভাগীয় শহরে পথশিশুর আনুমানিক সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লক্ষ এবং একই জরীপে বলা হয় ২০১৪ সনে এই সংখ্যা হবে প্রায় ১২ লক্ষ। পথশিশুদের জীবন-যাপন অত্যন্ত দুর্বিসহ। তারা অধিকাংশ সময়েই রাস্তায়, পার্কে, ট্রেন ও বাস ষ্টেশনে, লঞ্চ ঘাটে, সরকারি ভবনের নীচে ঘুমায় এবং প্রতিনিয়তই নাইট গার্ড কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থর সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়।

অধিকাংশ পথশিশু তিন বেলা খাবার পায় না। ফলে তারা বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টের পচা-বাসী খাবার, এমনকি ডাস্টবিনের দুর্গন্ধযুক্ত খাবারও খেয়ে থাকে। নোংরা স্থানে চলাফেরা ও ঘুমানোর কারণে চর্ম রোগে আক্রান্ত হয় বেশীর ভাগ পথশিশু। পথশিশু, বিশেষ করে মেয়ে শিশুরা যৌনবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব শিশুরা বেঁচে থাকার তাগিদে ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকে। কখনো কখনো তাদেরকে জোরপূর্বক যৌন পেশায় নিয়োজিত হতে বাধ্য করা হয়।

অনুষ্ঠানে গৃহকর্মকে আনুষ্ঠানিক সেক্টর হিসাবে স্বীকৃতি, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুশ্রমকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, খসড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি জরুরী ভিত্তিতে চুড়ান্ত করা, পথশিশুদের স্থায়ী পুনর্বাসনের লক্ষ্য সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা, পথশিশুদের জন্য রাত্রিকালীন আবাসনের ব্যবস্থাসহ নয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সংস্থার উপ-নির্বাহী পরিচালক মোজাম্মেল হক। বক্তব্য রাখেন, বিল্‌স’র সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ, শিশু সুরক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন খান, শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ প্রমূখ।

উল্লেখ্য, ব্রেড ফর দি ওয়ার্ল্ড- জার্মানীর আর্থিক সহযোগিতায় এএসডি গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষা ও পথশিশুদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে রাজধানীতে ‘ডেভেলপমেন্ট আব চিলড্রেন এ্যাট হাই রিস্ক’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *