মোল্লা ওমর ছিলেন আফগানিস্তানের শীর্ষ তালেবান নেতা। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোল্লা ওমর মার্কিন সেনাদের নাকের ডগাতেই ছিলেন। কিন্তু তারা তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ‘দ্য সিক্রেট লাইফ অব মোল্লা ওমর’ বইটিতে। বইটি লিখেছেন হল্যান্ডের অনুসন্ধানি সাংবাদিক বেট্টে ড্যাম।
বইটিতে বলা হয়েছে, মোল্লা ওমর পাকিস্তানে পালিয়ে গেছেন বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসলেও তিনি কখনও পাকিস্তানে আত্মগোপন করেননি।
বরং তিনি তার নিজ প্রদেশ জাবুলে অবস্থিত একটি বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে তিন মাইল দূরে বসবাস করেছেন। তালেবান নেতাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া ও তাদের ওপর গবেষণার কাজে পাঁচ বছর সময় ব্যয় করে বইটি লিখেছেন ড্যাম।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান মোল্লা ওমর। সে সময় তালেবান নেতার দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালনকারী জাব্বার ওমরির সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়েছিলেন বেট্টে ড্যাম। ২০১৩ সালে অসুস্থতার জেরে স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তালেবান নেতাকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন ওমরি।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে উৎখাত করে যুক্তরাষ্ট্র। মোল্লা ওমরের মাথার দাম এক কোটি ডলার ঘোষণা করে ওয়াশিংটন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মার্কিন সেনাদের নাকের ডগায় অবস্থিত একটি বাড়িতে ১২ বছর অবস্থান করেন মোল্লা ওমর।
বইটিতে বলা হয়েছে, একবার মার্কিন সেনারা ওই বাড়িটিতে তল্লাশিও চালিয়েছিল কিন্তু তারা তালেবান নেতাকে খুঁজে পায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ করার দাবি করলেও বেশিরভাগ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্মদাতা ও পালনকর্তা হিসেবে ওয়াশিংটনের কুখ্যাতি রয়েছে। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে দীর্ঘ একযুগ ধরে তালেবান নেতার বসবাসের এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সেই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করে।
আত্মগোপনে থাকার সময়ে মোল্লা ওমরের পক্ষে তালেবান গোষ্ঠীকে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি বলে জাব্বার ওমরি জানিয়েছেন; যদিও তালেবান জঙ্গিরা সে সময় দাবি করত তারা মোল্লা ওমরের নির্দেশে কাজ করছেন।
বেট্টে ড্যামের লেখা বইটি গতমাসে ডাচ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এবং শিগগিরই এর ইংরেজি ভার্সন বাজারে আসবে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।