ভারতে বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন পাকিস্তান থেকে ফেরার পর থেকে হাসপাতালে তার শারীরিক পরীক্ষা চলছে। তবে পাকিস্তান আড়ি পাতার জন্য তার শরীরে কোনো চিপ বা যন্ত্র প্রতিস্থাপন করেছে। এমনই জল্পনা আর আশঙ্কা যখন উঁকি দিচ্ছিল, তখন সে আশঙ্কা উড়িয়ে দিল দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতাল।
এমআরআই এবং অন্যান্য পরীক্ষার পর সেখানকার চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে তার শরীরে কোনো রকম কোনো মাইক্রোচিপ বা যন্ত্র ঢোকানো হয়নি।
তবে পরীক্ষায় দেখা গেছে, অভিনন্দনের মেরুদণ্ডে এবং পাঁজরের হাড়ে চোট রয়েছে। আর এজন্য আরও অন্তত ১০ দিন তার চিকিৎসা চলবে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রবিবার অভিনন্দন তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এদিকে তার ডি-বিফ্রিং (অর্থাৎ মিগ-২১ যুদ্ধবিমানে ওড়া থেকে শুরু করে ‘ডগ ফাইট’, বিমান ধ্বংস হয়ে যাওয়া, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মাটিতে নামা, পাক সেনার হাতে বন্দী হওয়া এবং ভারতে ফেরা পর্যন্ত সমস্ত কিছু সেনা কর্তাদের জানানো ও বর্ণনা করা) হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া আরও চলবে বলে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
মিগের মতো যুদ্ধবিমানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০০ কিলোমিটারেরও বেশি থাকে। এই বিপুল গতিবেগে চলা যুদ্ধবিমান থেকে ‘ইজেক্ট’ করা অর্থাৎ চলন্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া যে উচ্চতায় ‘ইজেক্ট’ করা হয়, সেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও ভূমি বা মাটির থেকে কয়েক গুণ বেশি থাকে। তাই পাঁজরের হাড়, হৃদপিণ্ড, ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অভিনন্দনের ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কাই করা হচ্ছিল। রবিবার তার একাধিক পরীক্ষার রিপোর্টেও তেমনটা দেখা গেছে। এ ছাড়া বুকের পাঁজরের হাড়ে চিড় রয়েছে। পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়ার পর তাকে যে মারধর করা হয়েছিল, সেটার কারণে নাকি চলন্ত বিমান থেকে বেরিয়ে আসার কারণে হয়েছে সেটা স্পষ্ট নয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বশেষ সংকটের শুরু গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে।
এই ঘটনার ১২ দিন পর গত মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। পরদিন দুই দেশের সেনাদের মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে গোলা ও গুলিবিনিময় হয়। বুধবার সকালে বালাকোটে হামলার বদলা নেয় পাকিস্তান। এরপর আকাশযুদ্ধে ভারত হারায় দুটি যুদ্ধ বিমান। পাকিস্তান বাহিনীর হাতে বন্দী হন দেশটির পাইলট অভিনন্দন। অন্যদিকে পাকিস্তান হারায় একটি যুদ্ধ বিমান।