গ্রাম বাংলা ডেস্ক:এইচ এম এরশাদজাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, ‘আমি নির্বাচন করি নাই। আমার নাম লালমনিরহাটের পাটগ্রাম আর রংপুরে এসেছে। আমি ভোট করতে রাজি না হওয়ায় আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, এরপর সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নির্বাচন হলো, জাতীয় পার্টি কিছু আসন পেল।’
বুধবার বিকেলে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁপারহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রোকনউদ্দিনের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েকজন নেতার জাপায় যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ এসব কথা বলেন।
জনসভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার দল আমার নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করেছে। আমার ভাই জিএম কাদের আমার কথা শুনে ভোট করে নাই। আমি বলছি, এই নির্বাচনের কোনো মূল্য নাই। আগামী নির্বাচন হবে প্রকৃত নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটা সরকার আসে কেন? সরকার আসে কাজ করার জন্য, মানুষকে শান্তি-সুখে রাখার জন্য। এখন মানুষ শান্তিতে নাই, তারা শান্তিতে কোনো কাজ করতে বা ঘুমাতে পারে না। এখন ঘরে থাকলে মানুষ খুন হয় আর বাইরে গেলে গুম হয়।’
জাপার চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ এই ধরনের সরকার চায় না। দেশি বা বিদেশিরা নতুনভাবে দেশে কোনো কাজে বা ব্যবসায় অর্থলগ্নি করতে চায় না। দেশের ব্যাংকে দেদারসে লুট হচ্ছে। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির শাসনামলে মন্দির, গির্জায় আগুন লাগেনি, ভাঙচুর হয়নি, হামলাও হয়নি। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সব মানুষের এ দেশে শান্তি-সুখে থাকার অধিকার আছে। কিন্তু এখন তাদের অনেকেই তা পারছেন না।
এরশাদ বলেন, ‘আমার ছোট ভাই জিএম কাদের লালমনিরহাট-৩ আসনের এমপি হয়ে মহাজোট সরকারের পরপর দুটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। আপনারা পত্রিকায় পড়েছেন তাঁর সম্পদ না বেড়ে কমেছে। আর মহাজোট সরকারের অন্য মন্ত্রীদের সম্পদ কী পরিমাণ বেড়েছে, তা-ও পত্রিকায় পড়েছেন। আমার ছোট ভাই স্পষ্টভাষী, সত্ ও সাহসী, তাই তার অবৈধ সম্পদ সৃষ্টি হয়নি। আমি বড় ভাই হিসাবে তাকে মাঝেমধ্যে সাহায্য সহযোগিতা করি। এই হলো একজন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীর বর্তমান অবস্থা।’
এরশাদ লালমনিরহাট-১ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ মোতাহার হোসেনের একটি বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘আমি আগামী নির্বাচনে ওই আসন থেকে নির্বাচন করব, তখন দেখা যাবে আমি জিতি নাকি তিনি জেতেন।’ তিনি বলেন, লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে জি এম কাদের এবং লালমনিরহাট-২ আসন থেকে জাপার প্রার্থী হিসেবে সদ্য বিএনপি থেকে জাপায় যোগদানকারী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রোকনউদ্দিন বাবুলকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
চাঁপারহাট উচ্চবিদ্যালয়ের জেলা জাপা আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন লালমনিরহাট জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের।
সম্প্রতি প্রথম আলোতে জিএম কাদেরের একটি সাক্ষাত্কার প্রকাশিত হলে পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ তাঁকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেন। এ ছাড়া অপর একটি জাতীয় দৈনিকে জি এম কাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতি ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখলে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, জি এম কাদের ইতিমধ্যেই পার্টির চেয়ারম্যান বরাবরে সতর্ক ও কারণ দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব দিয়েছেন।
বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হয়ে জাপার এ জনসভাটি সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ হয়। চাঁপারহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে। বিএনপির নেতা রোকনউদ্দিন বাবুল কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান প্রার্থী হলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকেন।