ঢাকা: চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার ঘটনায় সরকারেরও দায় রয়েছে বলে মনে করেন ১৪–দলীয় জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেছেন, ‘এ ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এই কারণে, এটির দায় আমাদের সবারই। আমরা যেহেতু সরকারে আছি, দায় আমাদের সবারই।’
চকবাজারে অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তিদের দেখতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে যান ১৪ দলের নেতারা। এরপর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম এ মন্তব্য করেন।
গত বুধবার রাতে চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সরকারি হিসাবে ৬৭ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। তবে গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মনে করা যায় যে, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। যত দ্রুত সম্ভব কেরানীগঞ্জে যে জায়গাটি রাসায়নিক পল্লি নামে স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হোক। সম্ভব হলে তিন মাসের মধ্যে জায়গাটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা করে রাসায়নিক ব্যবসা কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, এসব দাহ্য পদার্থ যদি ঘনবসতি এলাকায় থাকে, তাহলে আবারও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। ব্যবসায়ীদের তা বুঝতে হবে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তির (নিমতলী) মাধ্যমে শত শত লোককে হারাতে হয়েছে। এই ব্যবসা কোনোভাবেই এমন ঘনবসতি এলাকায় থাকতে পারে না।
প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার কথা বলে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এটি বাস্তবায়ন করার জন্য যা যা প্রয়োজন করতে হবে। প্রয়োজনে জনগণের স্বার্থে বলপ্রয়োগ করে হলেও এদের সরিয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, এসব ‘অর্থলোভী’ ব্যবসায়ীর কাছে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেছে। জনস্বার্থে প্রশাসনকে কঠোরতা দেখিয়ে এই সময়ের মধ্যে এসব রাসায়নিক ব্যবসায়ীকে সরিয়ে দিতে হবে। ট্যানারি যদি সাভারে নেওয়া যেতে পারে, তাহলে এটি কেন নেওয়া যাবে না? এটা করতে হবে। এই দায়িত্ব সবার।
সাবেক দুই শিল্পমন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমাদের ১৪ দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া কয়েক দিন আগে যে কথা বলেছেন, তিনি সঠিকভাবে তা বলেননি। এটি তাঁর বলা ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, আমির হোসেন আমু একজন জ্যেষ্ঠ নেতা, তিনি যখন দায়িত্বে ছিলেন, তখন ট্যানারিশিল্প সাভারে সরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর আন্তরিকতার কারণে সেটা সম্ভব হয়েছে। আমার মনে হয়, সময় পেলে তিনি এটিও (রাসায়নিক গুদাম অপসারণ) করতে পারতেন। একজন ভুল বলেছেন, এতে ভুল–বোঝাবুঝির কিছু নেই। ১৪ দল যেভাবে আছে, সেভাবে থাকবে।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এই মর্মান্তিক সময়ে কাউকে দোষারোপ না করে এখন রাসায়নিক গুদাম সরাতে হবে। অতীতের কথা আলোচনা করে লাভ নেই। এখন মানুষকে বাঁচাতে হবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এখন যার যার দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত। আর কাউকে হারাতে চান না।
মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, চকবাজারের হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্য সমগ্র জাতি শোকাহত। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হয়েছে। প্রতিটি বাঙালি আজ শোকাহত, ব্যথিত এবং মর্মাহত।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, আওয়ামী লীগের সাংসদ হাজী সেলিম, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ ১৪ দলের নেতারা।