হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধি : একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে এক নির্যাতিত বালিকার আর্তনাদের কাহিনি ‘লাল জমিন’। মান্নান হীরার রচনা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় সম্প্রতি জেলা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা উত্তরবাংলা কলেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টায় উপজেলার কাকিনা উত্তরবাংলা কলেজ অডিটোরিয়ামে এক সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রদর্শিত হয় নাটকটি। এতে একক অভিনয় করেন মোমেনা চৌধুরী।
যুদ্ধস্মৃতি জাগিয়ে তোলা নাটকে মোমেনার অনবদ্য অভিনয় আবেগাপ্লুত করে তোলে দর্শকদের। মঞ্চের জনপ্রিয় মুখ মোমেনা।
এই বিখ্যাত নাটকের কথা আগে থেকেই জানতেন নাট্যপিপাসু দর্শকদের বড় অংশ।
তাই উৎসবের আলোচনা পর্বটি চলাকালে দর্শকদের আর যেন তর সইছিল না। একসময় সেই প্রহর ভাঙলেন কাকিনা উত্তরবাংলা কলেজের প্রভাসক সুবাস রায়।
মাইকে ঘোষণা দিলেন, আর কিছুক্ষণ পরেই ‘লাল জমিন’ নিয়ে মঞ্চে উঠবেন মোমেনা চৌধুরী। মুহূর্তেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসে মিলনায়তনজুড়ে।
এবার মোমেনা উঠলেন, মঞ্চে তখন মিটিমিটি রঙিন আলো।
দেশজুড়ে যে ‘লাল জমিন’ আর মোমেনার কীর্তিগাথা রচিত, সেটা উপভোগের সুযোগে দর্শক সারি যেন স্থির। মোমেনা নিজেই ফুটিয়ে তুলছেন একের পর এক চরিত্র।
নাটকের বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। মোমেনা তাঁর অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক সংলাপ দিচ্ছেন আর দর্শকদের চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে। একক অভিনয়।
মঞ্চ নাটকের এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রথমদিকে মোমেনা ধীরস্থির থাকলেও খানিক পরে পাল্টে যায় তার অভিনয়ের ধরন। তখন ফুটে ওঠে মঞ্চ মাতানোর মুন্সিয়ানা।
১৪ বছর বয়সী কিশোরী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন। দুরন্ত বালিকাজীবন, বর্ণিল কৈশোর, দুঃসহ বয়ঃসন্ধিকাল।
মুহূর্তেই এক কাল থেকে আরেক কালে যাচ্ছেন তিনি, নিয়ে যাচ্ছেন যেন দর্শককেও। মঞ্চই বাড়ির উঠান, খড় ছিটানো, এক্কাদোক্কা খেলা, ফসল ফলনের জায়গা, পদ্ম-শাপলা ফোটা বিল।
দর্শকের সামনে পুরো মঞ্চটাই যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। মোমেনার অভিনয় ধীরে ধীরে এক অনন্য উচ্চতায় উঠতে শুরু করে।
হলভর্তি সব দর্শক স্তম্ভিত হয়ে মোমেনার অভিনয় দেখছিলেন, নিশ্চুপ মুগ্ধতায়।
নাটকের ঠিক মাঝামাঝিতে দেখা যায় খানখান হয়ে ভেঙে পড়া মোমেনার স্বপ্ন। শেষে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে পাওয়া বাংলাদেশ যেন লুটেরাদের রাজ্য! অবাধ শোষণ, নির্যাতন, বঞ্চনা আর প্রতারণার অভয়ারণ্য।
প্রায় এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের নাটকটি মঞ্চায়নে কেঁদে ফেলেন অনুষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। অশ্রু মোছেন মঞ্চের অন্য অতিথি-দর্শকরাও।
লাল জমিন নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে ১৯৩ তম মঞ্চায়ন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
উত্তরবাংলা কলেজের অধ্যক্ষ এএসএম মনওয়ারুল ইসলাম বলেন, এই নাটকের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হবে।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধকালীন নারীর অবদানকে এই নাটকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মোমেনা চৌধুরীর একক অভিনয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান ফুটিয়ে তোলায় ধন্যবাদ জানান তিনি।
লাল জমিন নাটকটি কাকিনা উত্তরবাংলা কলেজে ১৯৩ তম মঞ্চায়নের মাধ্যমে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নাট্যাভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী বলেন, সর্ব প্রথমে দর্শকদের ধন্যবাদ।
কাকিনা উত্তরবাংলা কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী দর্শক কোনো প্রকার আওয়াজ ছাড়াই শান্তভাবে নাটকটি উপভোগ করেছেন।
সেই দিক বিবেচনা করে হলরুমে প্রচুর দর্শকের উপস্থিতি দেখেও খুব খুশি মোমেনা চৌধুরী।